প্রতিনিধি, নীলফামারী: রংপুর পরিবহন মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটে নাকাল যাত্রীরা। দুই দিনের এ ধর্মঘটে অচল উত্তরের জেলা নীলফামারী। গতকাল সকাল সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ পরিবহন ধর্মঘট চলবে আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। নীলফামারীতে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে জেলা শহরের দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, শনিবার (আজ) রংপুরে বিএনপির মহাসমাবেশ বানচাল করতে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে জনগণকে জিম্মি করা হয়েছে। আমরা রাজনীতি করি না, রাজনীতি বুঝিও না, তাহলে কেন এই যাত্রীদের বিড়ম্বনা?
অন্যদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম অভিযোগ করে বলেন, পরিবহন ধর্মঘট ডেকে সব যানবাহন বন্ধ করে দিলেও রংপুরের বিভাগীয় গণসমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেবে। তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। তবে সমাবেশ বন্ধের যত চেষ্টাই করা হোক না কেন, রংপুরে বিএনপির সমাবেশ ঠেকাতে পারবে না কেউ।
সৈয়দপুর টার্মিনালে আসা ঠাকুরগাঁওয়ের দম্পতি আরিফুল ইসলাম ও সাবিয়া আকতার বলেন, জরুরি কাজ থাকায় ঢাকাগামী একটি কোচে রাতে সৈয়দপুরে এসেছি। এখন ফিরে যেতে হবে ঠাকুরগাঁওয়ে। কিন্তু টার্মিনালে এসে দেখি কোনো বাস চলছে না। বেশি ভাড়া দিয়ে বিকল্পভাবে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।
নীলফামারী জেলা শহরের নিউ বাবুপাড়ার কাপড় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, দোকানের মালামাল শেষ হওয়ায় রংপুরে যাওয়া অতি জরুরি, কিন্তু বাস মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটে দুই দিন পর যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এতে সময়ের অপচয়সহ আর্থিক ও ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে। এর দায় কে নেবে?
সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া (দোলাপাড়া) গ্রামের জহুরুল হক জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বড় বোন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে অনেক চেষ্টা করে বাস না পাওয়ায় এখন ইজিবাইকে যেতে হচ্ছে। ১৫০ টাকার ভাড়ার স্থলে আমার ২৫০ টাকা মাশুল গুনতে হবে। তিনি বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংগঠনটি পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে। তাই রাজনৈতিক কারণে বাস ধর্মঘট ডেকে যাত্রীদের হয়রানি করা হচ্ছে।
নীলফামারী বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি শাহনেওয়াজ শানু বলেন, রংপুর পরিবহন মালিক সমিতির ডাকে এ ধর্মঘট চলছে। তবে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়, মহাসড়কে নসিমন, করিমন ও থ্রি হুইলারসহ অবৈধ যান চলাচলের প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এতে আমাদের দাবিগুলো মানা না হলে প্রয়োজনে বড় পরিসরে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হবে। তিনি বলেন, পরিবহনের শ্রমিকরা এ ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে পরিবহন বন্ধ রেখেছে। তাদের ডাকা ধর্মঘটের সঙ্গে বিএনপির মহাসমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।
জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার বলেন, আগামীকাল আমাদের রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশ। এই সমাবেশ ঠেকাতে সমাবেশের দুদিন আগে থেকেই পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে। বিএনপি কোন সমাবেশ ডাক দিলে আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় বাধার সৃষ্টি করে। তিনি আরও বলেন, সব বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল করা হবে।
