ছিলেন দিনমজুর। এখন সফল উদ্যোক্তা। ঢাকার সাভারে গড়ে তুলেছেন একটি নার্সারি। সেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ২০ জনের। সম্প্রতি শেয়ার বিজকে তার উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহিদ হাসান
ব্যক্তিগত ও কর্মজীবন নিয়ে বলুন….
আমিনুল ইসলাম: রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার রামনাথ গ্রামে আমার জম্ম। ৯ ভাই বোনের মধ্যে আমি ছিলাম চতুর্থ। অভাবের কারণে ৮ম শ্রেণীর পর আর পড়ালেখা করতে পারিনি। তখন থেকেই জীবিকার তাগিদে বাড়ি থেকে দূরে চলে যাই। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় দিনমজুরের কাজ করি।
এভাবে চলতে চলতে একদিন ঢাকায় চলে আসি। প্রায় ১৫ বছর আগে সাভারের দোসাইদ এলাকাতে একটি নার্সারিতে দিনমজুরের কাজ শুরু করি। বেতন ছিল মাসে দেড় হাজার টাকা। এভাবে প্রায় চার বছর কেটে যায়। কাজ করতে করতে নার্সারি ও গাছের পরিচর্যা বিষয়ে মোটামুটি জ্ঞান অর্জন করি। বীজ থেকে চারা, গাছের কলম থেকে শুরু নার্সারির সবকিছু আমার ভাল লেগে যায়।
নার্সারি গড়ে তুললেন কীভাবে?
আমিনুল ইসলাম: সেই নার্সারিতে চার বছর কাটানোর পর নিজে কিছু করার তাগিদ অনুভব করি। নিজের নার্সারি তৈরি করতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি। তখন কিছু টাকা জমানো ছিল। ১৪ হাজার টাকার মতো হবে। এর সঙ্গে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে কিছু টাকা ঋণ নিই। একটু সাহস করেই ২০০৩ সালে দোসাইদ এলাকায় ২৫ শতাংশ জমি লিজ নিই। নার্সারি গড়ে তুলি। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত কোন ব্যাংক থেকে ঋণ নেইনি।
নার্সারি সম্পর্কে কিছু বলুন….
আমিনুল ইসলাম: দেশি-বিদেশি নানা জাতের ডালিয়া, সূর্য্যমুখী, ইনকা গান্ধা, সিলভিয়া ডানথাস, পিঞ্জি, ইনফেসিয়াম, ক্যালেনডুলাস, ইন্টারহেনাম, টরেনিয়াম, গেজানিয়া, জিপসীসহ ফুলসহ নানা ধরণের দেশি গাছ রয়েছে আমার নার্সারিতে। মায়ের নামে সঙ্গে মিল রেখে নার্সারির নাম দিয়েছি ‘ফাতেমা নার্সারি’। আমার পরিশ্রমের ফসল এ নার্সারি।
নার্সারি গড়ে তুলতে কী ধরনের সমস্যায় পড়েছেন?
অর্থ। পুঁজি খুবই কম ছিল। তাই শেষ সম্বলটুকু বিনিয়োগ করতে চাইনি প্রথমে। কারণ সফল হতে না পারলে ঘুরে দাড়ানো বেশ অসম্ভব হয়ে পড়ত। শুরুতে এ ভয়টাই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। সফল হতে পারব কিনা সেই আশঙ্কা কাজ করত সবসময়।
এছাড়া প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের নানা স্থানে গাছ ও ফুলের চারা সরবরাহ করতে হয়। যেখানে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পাশাপাশি কিছু বিদেশী ফুলের চারা আছে যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রি করতে হয়। কারন অনেক গাছ আছে, যা একবার ফুল ফুটার পর মারা যায়। এছাড়া রাজধানীর কাছে বলে এখানাকার জমি লিজ নেয়ার ক্ষেত্রে দিন দিন টাকার পরিমান বাড়ছে। ফলে ব্যবসার লাভের পরিমান কিছুটা কমছে।
এখন কেমন চলছে?
নান রঙের ফুল আর সুবজের মাঝে কাজ করার আনন্দই আলাদা। পৃথিবীর কোন কিছুর সঙ্গে এর তুলনা হয় না। আর এই গাছ ও ফুল নিয়ে কাজ করতে কখনই ক্লান্ত লাগে না। প্রথমে ২৫ শতাংশ জমিতে শুরু করলেও, বর্তমানে ৪ একর জমিতে নার্সারি ব্যবসা পরিচালনা করছি। গ্রাহকের চাহিদার ভিত্তিতে ব্যবসা বৃদ্ধি করছি। নার্সারিতে বর্তমানে ২০ জন কর্মচারি কাজ করছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে মাসিক আয় লক্ষাধিক টাকা। পরিবারের খচর মিটিয়ে সঞ্চয়ও করতে পারছি। পরিবার ও সন্তান নিয়ে সুখে কাঁটছে আমার জীবন।
নার্সারি ব্যবসায় আসতে চাইলে কী করনীয়?
বেকার যুবকরা নার্সারি ব্যবসার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন। কর্মীরা যেমন কাজ করবে, তেমনি আপনাকে কাজ করে যেতে হবে। না হলে এই ব্যবসায় সফল হওয়া কষ্ঠকর হয়ে পড়বে। আরেকটা বিষয় হলো নার্সারি সম্পর্কে জানতে হবে। প্রয়োজনে সফল নাসারি উদ্যোক্তার সহযোগিতা নিতে হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সাভারের দোসাইদে আরও জমি লিজ নিয়ে নার্সারি ব্যাবসা প্রসারিত করতে চাই। গ্রামের অনেক যুবককে নার্সারি ব্যবসার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। একই সঙ্গে গ্রামের বাড়িতেও নিজের জমিতে নার্সারি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে নার্সারি থেকে ফুল ও গাছের চারা সরবরাহ করছি। পর্যায়ক্রমে আরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাব নিজের নার্সারিকে। দেশের সব জেলায় আমার ফাতেমা নার্সারি পরিচিত হয়ে উঠবে এমনটাই আমি প্রত্যাশা করছি।
Add Comment