সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়া একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে কম দায়ী হয়েও ক্ষতির শিকার হচ্ছে অনেক দেশ। এ কারণে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির শিকার দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে উন্নত বিশ্বকে। সব দেশই জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যার প্রতিকারে কাজ করছে। আমাদের দেশে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আছে, মন্ত্রী-উপমন্ত্রীও আছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় থাকলেই কোনো সমস্যার মোকাবিলায় সফল হওয়া যায় না। প্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও নাগরিকদের দায়িত্ব রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সত্যিই পড়ছে কি না, তা আমাদের দেশে চারটি মানদণ্ডে বিবেচনা করা হয়Ñপরিবর্তনের কারণে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, কোথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি মানুষ কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত দেশটি ক্ষতি মোকাবিলায় বা অভিযোজনের জন্য এরই মধ্যে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই এ চারটি মানদণ্ডেই বাংলাদেশ, জলবায়ুু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় শীর্ষে।
প্রাকৃতিক কারণেই জলবায়ু পরিবর্তন হয় না, কিছু মানবসৃষ্ট কারণও রয়েছে। মানবসৃষ্ট কিছু কারণ প্রকৃতিকে ক্ষেপিয়ে তোলে। তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগও হানা দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কার্যকারণ কমবেশি সবাই জানে। তাই মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেয়া অপেক্ষাকৃত সহজ। কিন্তু এ সহজ কাজও আমরা করছি না। ফলে পরিবেশের ওপর বিপর্যয় নেমে আসছে।
গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছে, ‘ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে পুড়ছে কৃষকের ফসল’ শীর্ষক প্রতিবেদন। তথ্যমতে, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার এলএইচবি ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে জমির পাকা ধান, ভুট্টা, আম, লিচু, কলা, মরিচ ও কচুক্ষেত নষ্ট হয়ে দিশাহারা কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে আমাদের প্রতিনিধি জেনেছেন, উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের হযরতপুর গ্রামের এলএইচবি ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে এলাকার অন্তত অর্ধশত কৃষকের জমির পাকা ধান কাটার সময়ে মাথায় হাত উঠেছে। তাদের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে ভাটার গ্যাসে প্রায় ১৫ বিঘা জমির পাকা ধান, প্রায় ১০ বিঘা জমির মরিচ ও কচুক্ষেত, প্রায় দুই বিঘা জমির ভুট্টাক্ষেতসহ প্রায় শতাধিক গাছের আম, লিচু, কলা ও পেয়ারা নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষক নাজমুল হক বলেন, ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে মরিচ ও কচুক্ষেত নষ্ট হয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে মরিচগুলো ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারতাম, কিন্তু আর হলো না। ভাটার ধোঁয়ায় মরিচের ফুল-ফল সাব মাটিতে ঝরে পড়ে গেছে। মরিচের পাশের ক্ষেতের কচুও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কী খাব? শুধু দিনাজপুর নয়, অনুমোদিত ইটভাটার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফসল ও পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটছে। দেশে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন’ আছে। এটির যথাযথ প্রয়োগ পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতেই ইট তৈরি নিশ্চিত হতো। আমরা আশা করি, আইনটি কার্যকরে আন্তরিক হবে প্রশাসন।