বর্তমান বিশ্বে যতগুলো ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প আছে তার মধ্যে জাহাজ ভাঙা শিল্প অন্যতম। এ শিল্পের সঙ্গে নানা ধরনের ঝুঁকি জড়িত। বিশেষ করে এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে জখমের শিকার হওয়া ও মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার দিক দিয়ে এ শিল্প রয়েছে সবচেয়ে ওপরে। এছাড়া পুরোনো জাহাজ থেকে নানা ধরনের বর্জ্য সমুদ্রের পানিতে নিপতিত হয়। এতে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব বিবেচনায় দীর্ঘদিন ধরে দেশের পরিবেশবাদীরা জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলোকে সবুজ ইয়ার্ডে রূপান্তরের তাগিদ দিয়ে আসছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত শিল্প মন্ত্রণালয় জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলোর মানোন্নয়নে তেমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেনি বলে প্রতীয়মান।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘জাহাজ ভাঙা শিল্প: দেশে মাত্র চারটি গ্রিন ইয়ার্ড!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে ১৫৪টি জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে গ্রিন বা সবুজ ইয়ার্ড রয়েছে মাত্র চারটি। একটি ইয়ার্ড সবুজ ইয়ার্ডে রূপান্তরের ব্যয় হয় মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা। আর একটি ইয়ার্ডে বছরে কয়েকশ কোটি টাকার জাহাজ ভাঙা কর্মযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়। তা সত্ত্বেও এই সামান্য অর্থ ব্যয় করে ইয়ার্ডগুলোকে সবুজ কর্মক্ষেত্রে রূপান্তর না করে অব্যাহতভাবে সমুদ্রের জলজ জীবন ও সমুদ্রপাড়ের স্থলজ জীবনের ক্ষতি করে চলেছে জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলো। যে চারটি প্রতিষ্ঠান সবুজ ইয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেছে তারা অনেকটা স্বপ্রণোদিত হয়ে এ কাজ করেছেন। এতে তাদের মুনাফা যে হ্রাস পেয়েছে তা নয়, বরং এর মাধ্যমে ইয়ার্ডগুলো দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছে। উল্লিখিত চারটি ইয়ার্ডের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে অন্য ইয়ার্ডগুলোও উচিত যথাশিগগির সবুজ ইয়ার্ডে রূপান্তর হওয়া।
ষাটের দশকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট সমুদ্র উপকূলে ঝড়ে আটকে একটি জাহাজ ভাঙার মাধ্যমে দেশে জাহাজ ভাঙা শিল্পের গোড়াপত্তন হয়। সময়ের পরিক্রমায় পত্র-পল্লবে বিকশিত হয়েছে এ শিল্প। দেশের অনেক বড় ব্যবসায়ী এ শিল্পে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। ফলে দেশের ইস্পাতশিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে জাহাজ ভাঙা শিল্প। কিন্তু জাহাজ কাটার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি শিল্পের আকার বড় হলেও এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন কমপ্ল্যায়ান্স পরিপালনে তেমন অগ্রগতি হয়নি। এর ফলে বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ হিসেবে বাংলাদেশের সমুদ্রকেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে সমুদ্রের মৎস্য ও প্রাণিজ সম্পদ হুমকির মুখে পড়ছে। এর পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে ইয়ার্ডগুলোকে সবুজ ইয়ার্ডে রূপান্তর করা আবশ্যক। শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৮৫টি জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠান তাদের ইয়ার্ড সবুজ ইয়ার্ডে রূপান্তরের কাজ শুরু করেছে। এ কাজ দ্রুত সম্পন্নে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিতে হবে। পাশাপাশি অনন্য ইয়ার্ডগুলোকেও দ্রুততার সঙ্গে সবুজ ইয়ার্ডের আওতায় আনার বিষয়ে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।