পরিবেশের দিকে লক্ষ্য রেখেই শিল্পায়ন

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সাভারে সরিয়ে নেওয়ার নির্ধারিত সময় অনেক আগে পার হয়ে গেলেও অনেক কারখানা এখনও স্থানান্তরিত হয়নি। যেসব কারখানা-মালিক সরকারি নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তারা যথাসময়ে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে কারখানার যাবতীয় যন্ত্রপাতি নির্ধারিত স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন। যারা সবক্ষেত্রে নিজের পুরো সুবিধাটুকু আদায় করতে চান, কেবল তারাই এখনও কাজটি সম্পন্ন করতে পারেননি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা সময় বাড়িয়েছে। তারপরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ট্যানারি-মালিক কারখানা সাভারে স্থানান্তরে ব্যর্থ হয়েছেন। ট্যানারি-মালিকদের সমিতি এ বছরের জানুয়ারি থেকে হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া ঢুকবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিল। এ অবস্থায় যারা বাধ্যতামূলক বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপির দোহাই দিয়ে শুধু কালক্ষেপণ করেছিলেন, তারা কীভাবে কারখানা পরিচালনা করেন তা দেখার বিষয়।

চামড়া শিল্পের উদাহরণটি উল্লেখ করা হলো এ কারণে যে, শিল্প স্থাপনের আগে ইটিপি স্থাপনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গাফিলতি করলে চামড়া শিল্পের মতোই অবস্থা হবে। অনেক কারখানা-মালিকই নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করতে চান না। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু প্লাস্টিক খাতে কারখানা স্থাপনে ইটিপি ছাড়া অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা তার ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। তিনি সরাসরি উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসার কথা বলেছেন, যেখানে সরকার সব ধরনের নীতিসহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেবে। মন্ত্রীর এ বক্তব্যের পরও প্লাস্টিক শিল্পের সঙ্গে জড়িত উৎপাদকরা যদি ইটিপির ব্যাপারে উৎসাহী না হন, তাহলে আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ইটিপি শুধু বাধ্যতামূলক নয়, বরং প্রতিটি পদক্ষেপে এটি যথাযথভাবে কাজ করছে কি না, তার পর্যবেক্ষণও জরুরি। বুড়িগঙ্গা নদী ইতোমধ্যেই শিল্পকারখানার বর্জ্যে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নদীতে স্বাভাবিক পানি নেই, অক্সিজেনের পরিমাণ শূন্য। একই অবস্থা বালু ও শীতলক্ষ্যার। সম্প্রতি ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তরিত হওয়ায় ধলেশ্বরীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। এগুলো পরিবেশের জন্য অশনিসংকেত। শুধু নদী নয়, মাটিও দূষিত হচ্ছে। মনে রাখা প্রয়োজন, মাটি ও পানি দূষণের সঙ্গে বায়ু এবং পরিবেশের অন্যান্য দূষণ সরাসরি সম্পর্কিত। জনস্বাস্থ্যের বিষয় তো রয়েছেই। অথচ ট্যানারি শিল্পের জন্য আধুনিক ও যথাযথ ইটিপি নীতিমালা রয়েছে। সে কারণেই আমরা বলতে চাই, শুধু নীতিমালা থাকলে হবে না, সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তাও দেখা দরকার নির্দিষ্ট সময় পরপর। প্লাস্টিক শিল্প আমাদের দেশে নতুন, তবে এর দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। প্লাস্টিক যদিও পরিবেশের ক্ষতি করে; কিন্তু উপযোগিতার দিক দিয়ে এর আবেদন অনেক। সে কারণে কীভাবে পরিবেশের কম ক্ষতি করে শিল্পটিকে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। তবে ইটিপি উপেক্ষা করে কারখানা স্থাপনে ছাড়পত্র দেওয়া উচিত হবে না।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০