শেয়ার বিজ ডেস্ক: দেশে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনে ‘উসকানি’ দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পরিবেশ অস্থিতিশীল করলে ‘একূল-ওকূল’ দুটোই যাবে। তিনি বলেন, ‘আজকে বেতন বাড়া, এটা-সেটাসহ নানা ধরনের আন্দোলন করতে যায় (পোশাক শ্রমিকরা)। এই রপ্তানি যদি বন্ধ হয়, তাহলে পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমও যাবে, ছালাও যাবে।’ সূত্র: বিডি নিউজ।
তিনি বলেন, ‘বেতন আর বাড়বে না, তখন চাকরিই চলে যাবে। ঘরে ফিরে যেতে হবে। তখন কী করবে?’ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলে, আমি বলব, শেষে একূল-ওকূল দুকূল হারাতে হবে। এটাও সবাইকে মনে রাখতে হবে।’
গত কয়েক দিনে রাজধানীতে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনে উসকানি দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে নেতারা উসকানি দিচ্ছেন, কারা তাদের প্ররোচনায় দিচ্ছেন, তাও ভেবে দেখতে হবে। কয়েক দিন আগে দেখতে পাচ্ছি, গার্মেন্ট শ্রমিকরা আন্দোলন করে। আন্দোলন করে, ঠিক আছে; কিন্তু যেসব দেশ আমাদের তৈরি পোশাক কিনবে…। আমরা ভালো সুবিধা পাচ্ছি। উৎপাদন বাড়ছে। এই সমস্ত শ্রমিকদের বেতন তো বন্ধ হয়নি। আমরা তো নিজেরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি, টাকা দিয়েছি। ভর্তুকি দিয়ে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা যাতে বেতনটা সরাসরি পায়, সেই ব্যবস্থাটা করেছি। সরাসরি ফোনের মাধ্যমে টাকা দিয়েছি। মালিকদের হাতে তো দিইনি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি খুব খোলাখুলিভাবে বাস্তব কথাটাই বললাম। কারণ যারা কিনবে (বিদেশি ক্রেতা), ক্রয়-ক্ষমতাও নেই। ক্রয়-ক্ষমতাও সীমিত হয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে আরও খারাপ হচ্ছে। আমরা আমেরিকা, ইউরোপসহ বিভিন্ন জায়গায় (পোশাক) পাঠাই। প্রত্যেক জায়গায় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। সেখানে মানুষ দুরবস্থায় আছে, কত মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে সকলের খাদ্য, টিকা, ওষুধসহ সবকিছু দিয়ে যেতে পারছি।’
মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতির ধীর গতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থার সংকটে উন্নত দেশগুলোও যে হিমশিম খাচ্ছে, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, সেসব দেশে দ্রব্যমূল্যও বেড়েছে। ইংল্যান্ডের মানুষ তিন বেলা খেত, এখন একবেলার খাবার বাদ দিয়েছে। তাদের সীমিত আকারে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। ভোজ্যতেল এক লিটারের বেশি কেউ কিনতে পারবে না। এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে।
আওয়ামী লীগই দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়েছে বলে মন্তব্য করে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমরা আন্দোলন, সংগ্রাম, জেল-জুলুম যা-ই ভোগ করি না কেন, দেশে স্থিতিশীলতা আমরাই আনতে পেরেছি। তারপরেও বারবার প্রচেষ্টা, কী?… আমাদের সরকারকে উৎখাতই করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে এই প্রথম ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশের উন্নতি হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে তুলেছিলাম। সেই টাকা ভেঙে ভেঙে বিদ্যুৎ, গ্যাস, কৃষি ও স্বাস্থ্যের জন্য ভর্তুকি এবং সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। এইভাবে কোনো দেশ করেনি।’
বিনা খরচে কভিড টিকা ও কভিড পরীক্ষার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তার পরেও কেউ যদি গোলমাল করার চেষ্টা করে, তাহলে এই দেশটা একেবারে স্থবির হয়ে যায়, সাধারণ মানুষের কী অবস্থাটা হবে?’
গ্রামের মানুষের অবস্থা ‘এখনও অনেক ভালো আছে’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সেটা যাতে ভালো থাকে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি। যে কারণে আমি আহ্বান করেছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কারণ বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাব, খাদ্যমন্দা। সেখানে আমাদের নিজের মাটি আছে, মানুষ আছে, ফসল ফলাতে হবে। নিজের খাবারের ব্যবস্থাটা অন্তত আমরা নিজেরা করব।’
সবাইকে মিতব্যয়ী ও খাদ্য অপচয় না করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব তো আর সরকার করতে পারবে না। নিজেকেও করতে হবে। এটা আমি আমাদের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে বলব।’ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জিনিসের দাম তো বাড়বেই। আন্দোলন করে যদি কারখানা ও কাজ বন্ধ করে দেয়, তাহলে তো চাকরি চলে যাবে। সেটা কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। তখন বেতন আর বাড়া নয়, বেতনহীন হয়ে যেতে হবে।’