নিজস্ব প্রতিবেদক: রফতানিমুখী খাতগুলোর মধ্যে ১২তম অবস্থান প্লাস্টিক খাতের। খাতটির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ খাতের উন্নয়নে সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো ধরনের শিল্পায়ন হবে না। যেসব প্লাস্টিক কারখানায় পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্য উৎপন্ন হয়, সেগুলোয় বাধ্যতামূলক বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) অনুষ্ঠিত ১২তম আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক মেলার উদ্বোধনকালে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ প্লাস্টিকদ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিপিজিএমইএ) এবং চীনা প্রতিষ্ঠান চ্যান চাও ইন্টারন্যাশনাল কোং যৌথভাবে চার দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করছে। এতে ১৪টি দেশের ২৪৬টি কোম্পানি তাদের বিভিন্ন পণ্য ও প্রযুক্তি প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা সালমান এফ রহমান। বিপিজিএমই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে চ্যান চাও ইন্টারন্যাশনাল কোং-এর নির্বাহী পরিচালক ওভারসিস জুডি ওয়াং উপস্থিত ছিলেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কোনো শিল্পায়নের প্রতি সরকারের সমর্থন নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না। যেসব প্লাস্টিক কারখানায় পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্য উৎপন্ন হয়, সেগুলোতে ইটিপি স্থাপন করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।’
বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে সংশ্লিষ্ট কারখানায় দ্রুত ইটিপি স্থাপনের জন্য উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসুন, আমাদের সরকার আপনাদের সম্ভব সব ধরনের নীতি সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেবে।’
মন্ত্রী জানান, জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬তে আমরা প্লাস্টিক শিল্পকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। দেশে এখন ছোট-বড় মিলে প্রায় পাঁচ হাজার ৩০টি প্লাস্টিকপণ্যের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ খাত থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে তিন হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসছে। এ খাতের উন্নয়ন ও পরিবেশবান্ধব অবস্থা নিশ্চিত করতে মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী ব্রিজের পশ্চিম পাশে ৫০ একর জমির ওপর একটি প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার জন্য ইতোমধ্যে একনেকে অনুমোদন হয়েছে। সেখানে ১৩৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ৩৭০টি প্লটে কমপক্ষে ৩৬০টি প্লাস্টিক শিল্প ইউনিট স্থাপন সম্ভব হবে বলে মন্ত্রী জানান।
প্লাস্টিকের সঙ্গে পাটপণ্যের প্রতিযোগিতার বিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএম মান্নান বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে বর্তমান সরকার বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বেসরকারি খাতের উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ আমলাতন্ত্রের কাছে গিয়ে ঘুরপাক খায়। এ জন্য বৃহত্তর সংস্কার দরকার।’
তিনি বলেন, ‘পাট ও প্লাস্টিক দুটোকেই এগিয়ে নিতে হবে। পাটের সঙ্গে যুদ্ধ নয়। অনেক অপ্রয়োজনীয় আইন-বিধি আছে, সেগুলো না সরালে গতি আনা যাবে না।’ প্লাস্টিক খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা যেতে পারে বলে মত দেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের শিল্প অন্য দেশের প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। এটাকে স্বনির্ভর করতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে উন্নয়ন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পাটের সঙ্গে প্লাস্টিকের দ্বন্দ্ব মেটাতে হবে। প্লাস্টিক পরিবেশের ক্ষতি করে। যখন যেখানে-যত্রতত্র এটা ফেলে দেওয়া হয়। ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্লাস্টিক খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেন।’
সভাপতির বক্তব্যে বিপিজিএমইএ সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্লাস্টিকপণ্য মেলা এবার বড় পরিসরে আয়োজিত হচ্ছে। এবার গত বছরের চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে।’
প্লাস্টিক খাতে রফতানির জন্য নগদ সহায়তা দাবি করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিকপণ্যে জিএসপি সুবিধা ছিল। সেটি স্থগিত হওয়ার পর দেশটির বাজারে রফতানির সুবিধা কমে গেছে।’ জিএসপি উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে দেশের বাজারে প্লাস্টিকপণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর দাবি করে তিনি বলেন, ‘পাটের সঙ্গে প্লাস্টিককে প্রতিযোগিতায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ছয়টি পণ্যের প্যাকেজিংয়ে পাটপণ্য বাধ্যতামূলক ছিল। এখন আরও ১১টি পণ্যের প্যাকেজিংয়ে পাটপণ্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া প্লাস্টিক প্যাকেজিংকে ১০০ ভাগ রফতানিমুখী করে একটা বিধিমালা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ এটি না করার আহ্বান জানিয়ে একটি সর্বজনীন প্যাকেজিং অ্যাক্ট তৈরির প্রস্তাবসহ ক্ষুদ্র খেলনাপণ্যের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন তিনি।
Add Comment