পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

রাজধানীর পরিবেশ দূষণ নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে বায়ু, শব্দদূষণ এবং বাস-অযোগ্য শহরের তালিকার প্রথম দিকে আছে আমাদের রাজধানী শহর। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তর লেখালেখি হলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই। উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো পরিবেশের উন্নয়নে বিভিন্ন নির্দেশ ও পরামর্শ দিলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছে না। সিটি করপোরেশনসহ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থাকলেও যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে পরিবেশের  প্রত্যাশিত অগ্রগতি নেই।

বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণসহ চার ধরনের পরিবেশদূষণে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে। এছাড়া দূষণের কারণে ওই বছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের ক্ষয়ক্ষতির এ চিত্র উঠে এসেছে। পরিবেশ দূষণ নিয়ে উচ্চ আদালতের একটি মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। ইটভাটা বন্ধে আদেশ বাস্তবায়ন না করা প্রসঙ্গে উচ্চ আদালত গত ১৮ জানুয়ারি বলেছেন, আমরা সাজা দিতে পারি। কিন্তু সাজা দিয়েই কী সব হয়? আমরা বিব্রতবোধ করি যে, কতবার এসব নিয়ে ডিরেকশন দেবো?’

সচেতন নাগরিক মাত্রই জানেন জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনজতি অভিঘাতে বাংলাদেশ বিশ্বে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবেশ দূষণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজধানীতে সবধরনের দূষণই বিদ্যমান। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়সহ নোংরা পরিবেশ বাস-অযোগ্য করে তুলেছে। দূষণ এতই মারাত্মক রূপ পরিগ্রহ করেছে যে, নগরবাসী নানা ধরনের মারাত্মক  ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ধুলোবালি, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মনোঅক্সাইড, সিসাসহ অন্যান্য বিষাক্ত  উপাদান বায়ুকে ভারী করে তুলেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। তারা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে সহজেই আক্রান্ত হচ্ছে। সুস্থ মানুষও দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ময়লা-বর্জ্যরে শহর হিসেবে ঢাকা অনেক আগে থেকেই পরিচিত। গাড়ির কালো ধোঁয়া, কলকারখানার বর্জ্য, রাজধানীর আশপাশের ইটভাটার ধোঁয়া পুরো পরিবেশকে দূষিত করে রেখেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণকালে বিপুল ধুলোবালির উদ্ভব।

উন্নত বিশ্বে পরিবেশ সুস্থ রাখার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবধরনের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। দেশে দেশে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে রয়েছে কঠোর আইন এবং তার প্রয়োগ। নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া কেউ কোথাও বর্জ্য ফেলতে পারে না।  তুলনা করতে গেলে বলা যায়, আমাদের পুরো শহরই ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।  এটি নিশ্চয়ই সফলতার দৃষ্টান্ত নয়! নিন্দুকেরা হয়তো দুর্নীতি ও লুটপাটের খবরকেই সামনে আনবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে মোড়ক উšে§াচনকালে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন, এটা আমাদের একটা মারাত্মক ভাবনার বিষয়কে তুলে ধরছে। তবে প্রতিবেদনটি তাৎপর্যপূর্ণ সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, পরিবেশ দূষণের মাত্রা ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে তিনি পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০