পরিশোধের চাপে বিদেশি ঋণ কমল এক বিলিয়ন ডলারের বেশি

রোহান রাজিব: বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ কমেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার। আগের বছর (২০২৩ সাল) ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ তিন মাসে বিদেশি ঋণ কমেছে ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার বা ১৩৪ কোটি ডলার। যদিও আগের প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০২৩) চার বিলিয়ন ডলার বেড়েছিল বিদেশি ঋণ।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২২ সালের শুরু থেকে ডলার বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে, যা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি ঋণ বাড়াতে বেশকিছু পরিকল্পনা করেছে। তার মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ঋণ নেয়ার জন্য চুক্তি করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ বাড়াতে চেষ্টা করছে। তবে ডলারের বাজারে এখনও অস্থিরতা থাকার কারণে বেসরকারি খাত নতুন ঋণ নেয়ার চেয়ে আগের ঋণ পরিশোধে বেশি মনোযোগী। তাই বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণ দ্রুত কমছে। আর বিদেশি ঋণের সুদহার বেশি হওয়ার কারণে উদ্যোক্তারাও ঋণ নিচ্ছেন না। তাই বিদেশি নতুন ঋণ বাড়ছে না। এতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধ দ্রুত হওয়া ও নতুন ঋণ না পাওয়ায় সার্বিকভাবে বিদেশি ঋণ কমে যাচ্ছে।

গত তিন মাসে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই বিদেশি ঋণের পরিমাণ কমেছে। প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে বাংলাদেশ সরকারের বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৯ বিলিয়ন বা সাত হাজার ৯০০ কোটি ডলার, গত ডিসেম্বর মাস শেষে যা ছিল ৭৯ দশমিক ৬৯ বা সাত হাজার ৯৬৯ কোটি ডলার। এ হিসাবে গত তিন মাসে সরকারি খাতে বিদেশি ঋণ কমেছে ৬৮৯ মিলিয়ন বা ৬৮ দশমিক ৯০ কোটি ডলার।

দেখা যায়, সরকারের পাশাপাশি অন্য সরকারি সংস্থাগুলোর ঋণের পরিমাণও কমেছে গত তিন মাসে। মার্চ শেষে সরকারের সরাসরি নেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৭ দশমিক ৮২ বিলিয়ন বা ছয় হাজার ৭৮২ কোটি ডলার, ডিসেম্বর মাস শেষে যা ছিল ৬৭ দশমিক ৯২ বিলিয়ন বা ছয় হাজার ৭৯২ কোটি ডলার। আর মার্চ শেষে সরকারি অন্য সংস্থাগুলোর বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন বা এক হাজার ১১৯ কোটি ডলার, ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন বা এক হাজার ১৭৭ কোটি ডলার।

অন্যদিকে চলতি বছরের মার্চ শেষে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার, ডিসেম্বর মাস শেষে যা ছিল ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। ফলে গত তিন মাসে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ কমেছে ৬৪৬ মিলিয়ন বা ৬৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, গত তিন মাসে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রায় ৭৫ কোটি ডলার কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার ১০৪ কোটি ২৮ লাখ ডলারে। এসব ঋণের মধ্যে বাণিজ্যিক ঋণের পরিমাণ ৭৪৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। বাণিজ্যিক ঋণের বেশিরভাগ বায়ার্স ক্রেডিট, যার পরিমাণ প্রায় ৫৬৯ কোটি ডলার। বায়ার্স ক্রেডিটের এ ঋণ সাধারণত কঠিন শর্তের হয়ে থাকে। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা এসব ঋণ পরিশোধে ঝুঁকিতে থাকেন। এছাড়া বিদেশি ব্যাক টু ব্যাক এলসির ঋণ রয়েছে প্রায় ৯৫ কোটি ৫১ লাখ ডলার। আর ডেফার্ড পেমেন্টের ঋণ রয়েছে ৮২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

এদিকে গত তিন মাসে বেসরকারি খাতে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১০ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯২৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলারে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ গ্রহণ ব্যাপকহারে বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে বেড়েছে ঋণ। গত ডিসেম্বরে দেশের মোট বিদেশি ঋণ প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। যদিও দেশের জিডিপির অনুপাতে বিদেশি ঋণ গ্রহণে বাংলাদেশ এখনও নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ডে

জিডিপির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি যেকোনো দেশের জন্য নিরাপদ। বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ এখন জিডিপির প্রায় ২১ শতাংশের কম।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, গত কয়েক বছরে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ তুলনামূলকভাবে বেশি বেড়েছে। তাছাড়া কভিড-১৯ মহামারির কারণে এসব ঋণ পরিশোধ না করে সময় বাড়িয়ে নেয়া হয়। সে কারণে এখন চাপ বেড়েছে ঋণ পরিশোধের। তবে নতুন করে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ বৃদ্ধি না পাওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০