পরিসংখ্যানে মূল্যস্ফীতির বাস্তব চিত্র ফুটে উঠুক

কভিড মহামারির কারণে বিশ্ব নানাবিধ সমস্যায় পতিত। পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, সরবরাহেও সংকট চলছে। ফলে অপ্রত্যাশিত হলেও এটিই স্বাভাবিক প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতির হার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এ বিশ্ববাজারের প্রভাবে আমাদের দেশে পণ্যের দাম যতটা বাড়ে, তার চেয়ে বেশি বাড়ে স্থানীয় বাজারের কারণে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে, ভোজ্যতেলের দাম বিশ্ববাজারে বেড়েছে, তাই হয়তো আমাদের এখানেও বেড়েছে। কিন্তু চাল, মাছ, মাংস ও সবজির জন্যও কি আমাদের বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হয়?

মূল্যস্ফীতি নিয়ে গবেষণা করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। বৃহস্পতিবার ‘মূল্যস্ফীতি সরকারি পরিসংখ্যান বনাম প্রান্তিক মানুষের বাস্তবতা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী অতিথিরা বলেছেন, দেশের প্রান্তিক মানুষ প্রকৃত যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির শিকার হয়েছে, তা সরকারি পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হচ্ছে না। সানেমের হিসাবে দেখা গেছে, শহরাঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে গত মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

নিজস্ব গবেষণার ভিত্তিতে সানেম বলেছে, শহরে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ গড়ে তাদের মোট খরচের ৬১ দশমিক ৩১ শতাংশ খাদ্যের পেছনে ব্যয় করে। আর গ্রামীণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তা ৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা বিবিএস এ ক্ষেত্রে যে হিসাব দেয়, তার তুলনায় এ হার অনেক বেশি। বিবিএসের হিসাবে শহর ও গ্রামের পরিবার তাদের মোট খরচের যথাক্রমে ৪৫ দশমিক ১৭ এবং ৫৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ খাদ্যের পেছনে ব্যয় করে।

বিবিএস দেশের মূল্যস্ফীতির হার হিসাব করে থাকে। বিবিএস জাতীয় পর্যায়ে এবং গ্রাম ও শহরাঞ্চলের জন্য ভোক্তা মূল্য সূচক (কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্স বা সিপিআই) হিসাব করে। এ সূচকগুলো ব্যবহার করে শহর, গ্রাম ও জাতীয় পর্যায়ে মূল্যস্ফীতির হার গণনা করা হয়। শহর ও গ্রামের গড় আয়ের পরিবারগুলোর ওপর ভিত্তি করে এ ভোক্তা মূল্য সূচক তৈরি করা হয়। এখন সেখানে যদি গলদ থাকে, তাহলে তা থেকে সাধারণ মানুষ কোনো সুফল পাবে না। কেননা সরকার তো বিবিএসের তথ্য বিবেচনায় নিয়ে কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করে।

একটি বিষয় উল্লেখ করলে বিবিএসের তথ্যের সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট হবে। সিপিআই তৈরি করতে হালনাগাদ তথ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। কিন্তু বিবিএসের সিপিআই ও মূল্যস্ফীতি নির্ধারণে ২০১৬ সালে খানা

আয়-ব্যয়ের জরিপ আমলে না নিয়ে এখনও ২০০৫-০৬ সালের গৃহস্থালি আয় ও ব্যয় সমীক্ষার উপাত্ত ব্যবহার করছে। ফলে মূল্যস্ফীতির বাস্তব চিত্র উঠে আসছে না। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে প্রান্তিক ও নিন্ম আয়ের জনগোষ্ঠী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি ঠেকাতে বিবিএসের পরিসংখ্যানে মূল্যস্ফীতির বাস্তব চিত্র তুলে আনতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০