Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:34 pm

পরিস্থিতির উন্নতি না হলে স্কুল খোলা হবে না: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: মহামারির মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হলে তখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রমের উদ্বোধন করে গতকাল তিনি এ কথা বলেন। সূত্র: বিডিনিউজ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এর মধ্যে যদি অবস্থা ভালো হয়, খোলা হবে; যদি না হয়, আমরা খুলব না। কিন্তু আমি মনে করি, ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল প্রেস বিফিং অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন। অন্য বছর গণভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন হলেও মহামারির মধ্যে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার এ অনুষ্ঠান হয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন। তার পক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিভিন্ন পর্যায়ের ২৩ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ও মাদরাসার প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল এ অনুষ্ঠানে। তাদের সবাই এদিন নতুন বই পেয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকলে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। কওমি মাদরাসা বাদে অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা আছে। মহামারির মধ্যে এবার বছরের প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে বই উৎসব না করে ১ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ভাগে ভাগে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, এই করোনাভাইরাসের কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবচেয়ে কষ্ট পাচ্ছে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা। তার কারণ, স্কুল ছাড়া সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকা, এটা যে কত কষ্টকর, এটা সত্যিই খুব দুঃখের।

তার পরও ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন শিক্ষার্থীরা যে ঘরে বসে অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যার ফলে অন্তত ছেলেমেয়েরা একেবারে শিক্ষা থেকে দূরে যাচ্ছে না। কিছুটা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। আর সেইসঙ্গে আমরা মনে করি, আমাদের স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়ও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এবং এটা চলমান থাকবে।’

এই মহামারি থেকে কবে মুক্তি মিলবে, পুরো বিশ্ব সেই অপেক্ষায় রয়েছে বলে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা যখন একটু সিদ্ধান্ত নিলাম যে স্কুল খুলব, তখন আবার নতুন করে দ্বিতীয় ধাক্কা এলো করোনাভাইরাসের। কাজেই আমরা ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করেই…।’

মহামারির মধ্যে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা মোকাবিলা করার ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা। এবার নতুন বছরে মোট ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২টি বই বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিনা মূল্যে বই দিচ্ছি, যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা হাতে নতুন বই পায়। একটা নতুন বই পেলে একটু ভালোও লাগে। বইটা হাতে পাবে, মলাটটা লাগাবে, নামটা লিখবে, সুন্দরভাবে দেখবে, পড়বেÑসেটাই একটা আলাদা আনন্দ। সেই আনন্দটা যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা পায়, সেজন্যই আমরা ব্যবস্থা নিই প্রতি বছর।’

এবার মহামারির মধ্যে বিপুলসংখ্যক নতুন বই ছাপানো যে অনেক কঠিন ছিল, সে কথা তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বই বিতরণের সময় একসঙ্গে যেন বেশি সমাবেশ না হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভাগে ভাগে সবাইকে বিতরণ করাই ভালো।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি ঘরে বসে থাকা অত্যন্ত কষ্টকর, সময় কাটানোও কষ্টকর। তার পরও খালি পাঠ্যবই নয়, এমন অনেক বই আছে, পড়া যায়, যা পড়ার জন্য আমি অনুরোধ করব।’ আর শিক্ষার্থীরা যাতে খেলাধুলা করতে পারে, নিয়মিত কিছুটা রোদে বা খোলা হাওয়ায় যেতে পারে, অভিভাবকদের সেই পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান। পাশাপাশি বাইরে গেলে সবাইকে মাস্ক পরতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই তো একদিন এই দেশে কেউ ডাক্তার হবে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হবে, কেউ বিজ্ঞানী হবে, কেউ মন্ত্রী হবে, কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে। কেউ না কেউ তো কিছু হবে। কাজেই সেভাবে শিক্ষাগ্রহণ করবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। দেশে এবং বিদেশেও তারা নাম করবে। শিক্ষা যেহেতু সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কাজেই সেই শিক্ষা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’

বাংলাদেশের একজন মানুষও যেন ঠিকানাবিহীন না থাকে, সেই লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ভূমিহীন, গৃহহীন, তাদেরকে আমরা ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। প্রত্যেকের একটা ঠিকানা থাকবে। প্রত্যেক ঘরে শুধু বিদ্যুতের আলো নয়, শিক্ষার আলোও যাতে জ্বলে rseশিক্ষার আলোও আমরা জ্বালাব। সেভাবেই আমরা কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি।’

গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।