পরীক্ষার আগে হল খোলার দাবি ঢাবি শিক্ষার্থীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাস মহামারিতে পরীক্ষা নেয়ার আগে আবাসিক হল খুলে দেয়াসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসব দাবিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।

একই দাবিতে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রদল। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ১৮ মার্চ থেকে অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেশনজট রোধে অনলাইনে পাঠদান চালিয়ে গেলেও এতদিন পরীক্ষা নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেশনজট নিরসন ও ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে মহামারির মধ্যেই আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে স্নাতক ফাইনাল ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা নেয়ার রুটিন প্রকাশ করেছে।

পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা উচ্ছ¡সিত হলেও আবাসিক হল বন্ধ থাকায় ঢাকায় এসে কোথায় থেকে পরীক্ষা দেবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা উল্লেখ করে এর আগে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন আবাসিক খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের এসব দাবির মধ্যে রয়েছে পরীক্ষার আগে আবাসন নিশ্চিত করতে হবে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, প্রয়োজনে শুধু পরীক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দিতে হবে, পরীক্ষা নেয়ার আগে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ দিতে হবে, প্রয়োজনে মেকআপ ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে, একসঙ্গে দুই সেমিস্টার ফাইনাল নেয়া যাবে না, একটি সেমিস্টার শেষ করে পরবর্তী সেমিস্টারের প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট সময় দিতে হবে, যেসব বিভাগের পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা করা হয়েছে, তা বাতিল করে পুনরায় তারিখ ঘোষণা করতে হবে এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাসে যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে।

বুধবারের মানববন্ধনে স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আবিদ খান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা, এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারণ আমরা অনেকে হলে থেকে পড়ালেখা করতাম। এখন হঠাৎ করে ঢাকা শহরে কোথায় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব? পরীক্ষা নেয়ার আগে আমাদের এই বিষয়টা চিন্তা করা উচিত ছিল।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা। বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীর জন্য ঢাকায় থাকার জায়গা ব্যবস্থা করা দুরূহ। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য রীতিমতো একটি ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুমানিক ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী হলে থেকে পড়াশোনা করে। এরা সবাই নি¤œ মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। এসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশই টিউশনি করে চলত। এখন কারও টিউশনিও নেই। সবাই এখন গ্রামে অবস্থান করছে। অনেকের পিতামাতার আয়-উপার্জনও একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আবাসিক হল না খুলে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত অমানবিক।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এই মহামারি পরিস্থিতিতে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই জাতীয় কনসেন্ট লাগবে। বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। অনেক জায়গায় পরীক্ষা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই অনার্স ফাইনাল ও মাস্টার্সের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে না থাকে।’

পরীক্ষা দিতে এলে অনেক শিক্ষার্থীরই আবাসিক সমস্যা হবেÑস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে হলে থেকে পড়ালেখা করত। তাদের জন্য ঢাকায় থাকাটা একটু কষ্ট হবে। তবে এই মহামারিতে শিক্ষার্থীদের এ কষ্টের চেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০