Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:43 pm

পরীক্ষার দিন সকালে শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র নিয়ে ফাঁস করছেন: শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিয়মানুসারে পরীক্ষার দিন সকালে শিক্ষকদের হাতে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়। তা পেয়ে তারা ফেসবুকে তা ফাঁস করছেন। তখন পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর পেয়েও তা ঠেকানো যাচ্ছে না। সেই বাধ্যতার জন্য কিছু শিক্ষকের ‘অসততাকে’ দায়ী করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আয়োজনে এক মানববন্ধনে এমন অভিযোগ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা এমন একটি পরিবেশের মধ্যে আছি, যে আমরা সব খুলে বলতেও পারি না, সহ্যও করতে পারি না। কিন্তু আমরা আর সহ্য করব না। সত্যিকার অর্থে আমাদের মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষক দরকার।

প্রসঙ্গত, চলতি বছর এসএসসিতে বিভিন্ন পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। সেই প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে, যা পরীক্ষায় হুবহু মিলে যায়। কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরও কোনো পরীক্ষা বাতিল বা স্থগিত করার নির্দেশ দেননি মন্ত্রী।

দুদকের মানববন্ধনে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এবার প্রশ্ন ফাঁসের কিছু ঘটেছে। কিন্তু তা যখন বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়, তখন তা ফাঁস হয়নি। পরীক্ষার দিন ভোররাত থেকে প্রশ্ন ফেসবুক থেকে আসছে। সত্যি কিনা মিথ্যা তা পরের দিনের প্রশ্নের সঙ্গে মিলিয়ে বোঝা যায়।

মন্ত্রী বলেন, কর্তৃপক্ষ যখন প্রশ্নপত্র শিক্ষকের হাতে পৌঁছে দিয়ে ‘চিন্তামুক্ত’ হচ্ছেন, তখনই পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে প্রশ্নপত্র ফেসবুকে আসতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমরা তো পরীক্ষার আগে প্রশ্ন দিতে বাধ্য। গ্রাম অঞ্চলে এই প্রশ্ন নিয়ে যেতে হবে এতে উপজেলা পর্যায়ে প্রশ্ন রাখতে হয়। তাহলে কে প্রশ্ন বের করে দিচ্ছে?

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে- গতকাল এমন দাবি করে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, দুর্নীতির ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স। আমার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে হচ্ছে না তা বলছি না, দেশজুড়ে এই মন্ত্রণালয়ের কাজ বিস্তৃত। তবে এইটুকু বলতে পারি, মন্ত্রণালয়ের যে পরিধি আছে সেখানে সরাসরি দুর্নীতি হয় না। অস্বীকারও করি না, তবে আগের মতো অবস্থা নেই।

এদিকে দুদকের কারণে এবার ঢাকায় ভর্তি-বাণিজ্য হয়নি এমন মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠান। প্রতিনিয়ত তাদের তাৎপর্যপূর্ণ কার্যক্রম আমাকে মুগ্ধ করেছে। দুদকের অগ্রিম সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কারণেই এ বছর ঢাকার নামিদামি বিদ্যালয়ে কোনো ভর্তি-বাণিজ্য হয়নি।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন করতে না পারলে দুর্নীতি প্রতিরোধ ‘অসম্ভব’। দেশটা গড়তে গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। দেশের উন্নয়নের অভিযাত্রাকে চলমান রাখতে হলে দুর্নীতির মাত্রা কমাতেই হবে। দুর্নীতির কারণে আমাদের দুই থেকে তিনভাগ জিডিপি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর এ কারণে স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির ওপর জোর দিতে হবে।