পর্যটনশিল্প বিশ্বে একটি জনপ্রিয় শিল্পে পরিণত হয়েছে। এ শিল্পকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছে অনেক দেশ। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পর্যটনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে আমাদের পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ পর্যটনশিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ শিল্পে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশ অনেক পিছিয়ে আছে। আমাদের সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা বাংলাদেশকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন দেশে ও দেশের বাইরে বেশি বেশি প্রচার-প্রচারণা চালানো।
বাংলাদেশ পর্যটনশিল্পে একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এ দেশে রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন; রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাকৃতিক বালুকাময় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। সিলেটের চা বাগান, সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, মনপুরা দ্বীপ, চর কুকরী-মুকরী, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপসহ এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় নয়নাভিরাম নানা ভ্রমণ স্পট। এ ছাড়া সমৃদ্ধ প্রতœতাত্তিক নিদর্শন ও ঐতিহাসিক স্থাপনা এ দেশের পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনাকে বহু গুণে বৃদ্ধি করেছে।
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক সবার হাতে হাতে। ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো কাজে লাগিয়ে দেশের পর্যটন-আকর্ষক স্থানগুলো দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে সহজে তুলে ধরতে পারি। এ কাজটি যে কেউ করতে পারেন। ধরুন, আপনি পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথাও ঘুরতে গেলেন। এখন আপনি চাইলে আপনার স্মার্টফোনটি ব্যবহার করে চিত্তাকর্ষক জিনিসগুলো ফেসবুকে শেয়ার করতে পারেন।
তবে আশার কথা হলো, ফেসবুকে চোখ বুলালেই চোখে পড়ে ভ্রমণপিপাসুদের একাধিক গ্রুপ। এসব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তারা দেশের প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্যময় স্থানগুলো বিশ্বের কাছে তুলে ধরছে। অনেকে আবার নিরাপদ ভ্রমণের লক্ষ্যে তৈরি করছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান। এতে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানোর প্রয়াস লক্ষণীয়। তাদের মধ্যে অনেকে টিম গঠন করে ঘুরতে বের হন। সম্প্রতি আমাদের ক্যাম্পাস থেকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাত শিক্ষার্থী যশোর বেড়াতে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে আসিফ হোসেন তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পত্রিকার পাতায় তুলে ধরেন, যা অন্যদের ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, টিউটোরিয়াল ও ইনকোর্সের ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ঘুরে আসতে উৎসাহের কারণ হবে বলে মনে করি।
ঘুরতে বেরোলে বোঝা যায় পৃথিবীটা কত সুন্দর! অনেকে কাজের চাপে হতাশায় ভোগেন, বিষণœতায় পড়ে সুন্দর এ ধরিত্রীকে তিক্ত ভাবেন। তাদের জন্য ভ্রমণে বের হওয়া আরও বেশি জরুরি। ভ্রমণে বের হলে যার হাতে স্মার্টফোন আছে, সে একটি ছবি হলেও তোলেন। কিন্তু আমরা যদি আমাদেরই কোনো ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ছবিসহ নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে দিই, তাহলে সেসব পর্যটন কেন্দ্র মানুষের নজরে আসবে। অন্যরাও সেখানে ভ্রমণে আগ্রহী হবেন। দেশে চরাঞ্চল কিংবা প্রত্যন্ত অনেক এলাকা রয়েছে, যেগুলো অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর! কিন্তু প্রচারহীনতার কারণে সেগুলো পর্যটকদের চোখের আড়ালে রয়ে গেছে। তবে আশা জাগানিয়া দিক হলো, অনেক তরুণ ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। অনেকে ইউটিউবে চ্যানেল খুলে কিংবা ফেসবুক পেজ তৈরি করে নতুন নতুন ভ্রমণ স্পট আমাদের সামনে নিয়ে আসছেন। দর্শনার্থীরাও সেসব জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পের বিকাশে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও সুশৃঙ্খল পর্যটন গড়ে ওঠেনি। দেখা যায়, কোনো নতুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় স্থানে পর্যটন গড়ে উঠলে কিছু দিনের মধ্যে সে স্থান পরিবেশ দূষণের শিকার হয়। নির্বিচারে গাছপালা কেটে গড়ে তোলা হয় হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, সুউচ্চ ভবন ইত্যাদি। কিন্তু আমরা ভুলে যাই প্রাকৃতিক পরিবেশ টিকিয়ে না রাখতে পারলে পর্যটনশিল্পই ধ্বংস হয়ে যাবে। আবার অনেক জায়গায় ধারণক্ষমতার অধিক পর্যটকের সমাগম হওয়ায় সেখানকার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, যা কখনও কাম্য নয়। পর্যটন বা বিনোদন যেমন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা। কেননা প্রাকৃতিক পরিবেশে একটু বিশুদ্ধ সুশীতল বাতাস গ্রহণ করতেই মানুষ এসব স্পটে বেড়াতে আসে।
আবার অনেককে দেখা যায় পর্যটন এলাকায় মাইক বাজিয়ে কিংবা বক্সে উচ্চ ভলিউমে গান শুনতে, যা কখনও সমীচীন নয়। এতে অন্যান্য পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের বিরক্তির কারণ হয়। অনেককে ক্যামেরা বা মোবাইলে তরুণীদের ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে দেখা যায়। সবাই চায় একটি সুন্দর ও নিরাপদ ভ্রমণ। এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আমাদের মাতৃভূমি কতই-না সুন্দর! তাই তো রূপসী বাংলার কবি বলেছেন, ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না।’ আর তাই আসুন এ দেশের অপরূপ সৌন্দর্যকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরে আমাদের পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
মারুফ হোসেন
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়