রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ, বাঁশখালী, (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের বাঁশখালী সমুদ্রসৈকত বাংলাদেশের একটি অফুরন্ত অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের নাম। বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া, গ্লামারা, কাথরিয়া, সরল, বাহারছড়া, খানখানাবাদের উপকূলজুড়ে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সমুদ্রসৈকত। কতই না সুন্দর এ সৈকত। সৈকতের পূর্ব পাশে সারি সারি ঝাউ গাছ। উপকূলজুড়ে ঘন ঝাউ বাগান। জোয়ার-ভাটার ঢেউয়ে পর্যটকদের মন কাড়া শব্দ। সাগরের উপকূলজুড়ে বেড়ে ওঠা কেওড়া ও ঝাউবনে ঘেরা সবুজ এক দৃষ্টিনন্দন সৈকত ঘিরে চলে দিবানিশি জোয়ার-ভাটার খেলা। এতে নানা সৌন্দর্যে মুখরিত পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় বাঁশখালী সমুদ্রসৈকত।
সমুদ্র লাগোয়া অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ওপর ভিত্তি করে গড়া এ সমুদ্রসৈকতকে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের দাবি বাঁশখালীবাসীসহ সংশ্লিষ্ট মহলের। এ জন্য পর্যটন বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে স্থানীয়রা। তাছাড়া পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের জোর দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন ও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয় পর্যটনপ্রেমীরা।
স্থানীয়রা জানান, জাতীয় দিবস, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনের বাঁশখালীর উপকূলীয় সমুদ্রসৈকত হাজারো লোকের পদচারণায়মুখর হয়ে ওঠে। বঙ্গোপসাগর উপকূলজুড়ে ২৫ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতের ৭ পয়েন্টে দেখা মিলে হাজার হাজার পর্যটকের। তবে রাস্তাঘাটের বিপণœতা এবং থাকার জায়গা না থাকায় তড়িঘড়ি করে পর্যটকরা আবার বাঁশখালী সদরে কিংবা নিজ বাসস্থানে চলে যান। তবে রাস্তাঘাট উন্নত, ভালো মানের আবাসিক হোটেল এবং পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকলে কক্সবাজারের মতো বহু পর্যটকের ভিড় জমবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর। তাদের দাবি বাঁশখালীর উপকূলীয় ২৫ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতকে বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট হিসেবে চিহ্নিত করে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করা।
স্থানীয়দের মতে, অপার সম্ভাবনাময় এই সমুদ্রসৈকতকে যথাযথভাবে উন্নয়ন ও পরিচর্যা করা হলে কক্সবাজারের বিকল্প সমুদ্রসৈকত হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। স্থানীয় বাসিন্দাদের এ মতামতে একমত পোষণ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তারাও। তাদের মতে, অপার সম্ভাবনা বাঁশখালী সমুদ্রসৈকতকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়, তাহলে এখান থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হবে।
এদিকে বাঁশখালীর সমুদ্র তীরের ছনুয়া, খাটখালী, গ্লামারা, হালিয়াপাড়া, বাহারছড়া, কদমরসুল ও খানখানাবাদসহ সৈকতের বিভিন্ন অংশ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় সৈকতের সৌন্দর্য চোখে পড়ার মতো। ভাটার টানে সৈকতের প্রশস্ততা চোখে পড়ে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের চেয়েও এ সমুদ্রসৈকত অনেক বেশি প্রশস্ত। তবে বর্ষা মৌসুমে সৈকতের প্রশস্ততা কিছুটা কমে আসে। কিছু কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধের রক্ষায় পাথরের ব্লকগুলো সৈকতের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে। তবে ১৯৯১ সাল থেকে বেশ কয়েকটি প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় এ সৈকত এলাকার বেড়িবাঁধ তছনছ করে দিয়ে গেছে। ফলে পর্যটনের সৌন্দর্য বিকশিত হচ্ছে না। সমুদ্র তীরে আরও শক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলে। তা যদি ভাঙন প্রতিরোধ হয় তাহলে এটাই হতে পারে দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সমুদ্রসৈকত।
বাহারছড়া এলাকার শাহেদ এমরান বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এলাকার বিশাল চরে সারিসারি ঝাউ গাছের বাগান যে কারও নজর কাড়ে। এখানে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপিত হলে বিনোদনপ্রেমীরা উপকৃত হবেন। এ অপার সম্ভাবনার সমুদ্রসৈকতকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে দীর্ঘদিনের দাবি আমাদের। তাছাড়া এখানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে ঝাউবাগান সৃষ্টি করে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করলে সরকার লাভবান হবে, বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে।
খানখানাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখানে বিদ্যমান। দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত রয়েছে এখানে। সৈকতে লাল কাঁকড়া সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য আরও অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। এ বাঁশখালী সম্দ্রুসৈকত থেকে সরাসরি সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। সমুদ্রের সঙ্গে গা ঘেঁষে রয়েছে কুতুবদিয়া চ্যানেল, আর কাছেই দ্বীপ কুতুবদিয়া। পর্যটকরা চাইলে দ্বীপ ঘুরেও আসতে পারবেন। তবে রাস্তাঘাট আরও উন্নত হলে এখানে পর্যটকদের স্বর্গ হয়ে উঠবে।
খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জসিম হায়দার বলেন, ‘বাঁশখালী একটি পর্যটন সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে সমুদ্রসৈকত ছাড়াও ইকোপার্ক ও চা-বাগান রয়েছে। রয়েছে বহু পুরাকীর্তি। এখানকার সমুদ্রসৈকতের বিশালত্ব যেকোনো বিনোদনপ্রেমিককে আকৃষ্ট করে। ফলে পর্যটকরা একই সঙ্গে অনেক কিছু দেখার ইচ্ছা থাকলে অনায়াসে বাঁশখালীতে আসতে পারেন।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘একসময় বাঁশখালীর এ সমুদ্রসৈকতে যেতে পর্যটকরা ভয় পেত। সে এলাকাকে বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় আধুনিক ও স্থায়ী বেড়িবাঁধ করে দেয়াতে এখন পর্যটকরা সহজেই বেড়াতে যেতে পারে। ছুটির দিনে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। পর্যটকদের সুবিধার্থে এবং বিনোদনের জন্য ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতকে পর্যটন স্পট করার জন্য নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আশা রাখি অচিরেই তা বাস্তবায়নের মুখ দেখবে বাঁশখালীবাসী। তাছাড়া বাঁশখালী উপকূলজুড়ে মেরিন ড্রাইভ হলে পর্যটন এলাকার দৃশ্যপট এমনিতেই পাল্টে যাবে বলে মনে করি।