Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 12:11 pm

পর্যটনে প্রতিযোগী সক্ষমতায় এশিয়ায় সর্বনিম্নে বাংলাদেশ

জাকারিয়া পলাশ : বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক হলেও পর্যটন খাতে ব্যতিক্রমী তথ্য মিলেছে। এ বছরের ভ্রমণ ও পর্যটন বিষয়ক বৈশ্বিক সক্ষমতা প্রতিবেদনের তলানিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ১৩৬টি দেশের তথ্য নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম। ওই তালিকায় এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নামই রয়েছে সবার নিচে। গত বছরের তুলনায় র‌্যাংকিং দুই ধাপ বাড়লেও চার বছরে বাংলাদেশের অবস্থান পিছিয়েছে সাত ধাপ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (ইউএনডব্লিউটিও) এবং বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন কাউন্সিলের তথ্যের ভিত্তিতে ‘ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্স ২০১৭’ শীর্ষক এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। পর্যটন খাতে উন্নয়ন ও বৈশ্বিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই বছর পরপর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেয় ডব্লিউইএফ। সংক্ষেপে এটিকে বলা হয় ‘টিঅ্যান্ডটি কম্পিটিটিভনেস’ ইনডেক্স।

২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২৭তম। এ বছর প্রকাশিত প্রতিবেদনে ১৩৬টি দেশের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। মোট দেশের সংখ্যা পাঁচটি কমলেও বাংলাদেশের অবস্থান উন্নীত হয়েছে দুই ধাপ। এবার বাংলাদেশের অবস্থান দেখা গেছে ১২৫তম। র‌্যাংকিংয়ে দুই ধাপ উন্নতি হলেও পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের স্কোর রয়েছে অপরিবর্তিত (২ দশমিক ৯)।

বৈশ্বিক প্রতিবেদনে দেশের অবস্থার অগ্রগতি না মিললেও গত বছর ছিল বাংলাদেশের পর্যটন বছর। গত বছরকে পর্যটন বছর ঘোষণা করে এ খাতের উন্নয়নের জন্য তিন বছর মেয়াদি বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এসব পরিকল্পনার ফল পরের প্রতিবেদনে দেখা যেতে পারে বলে আশা করেন বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন শেয়ার বিজকে বলেন, পর্যটন বিষয়ে এমন প্রতিবেদন হয়ে থাকলে তা ভালো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ পর্যটক এবং বিদেশি পর্যটকের বিষয়টি আলাদাভাবে হিসেবে আনা দরকার। আমাদের অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। এখন এ সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখে উন্নীত হয়েছে। সাম্প্রতিক হলি আর্টিসানসহ বেশ কয়েকটি ঘটনায় আমরা বিদেশি পর্যটক পাওয়ার ক্ষেত্রে ধাক্কা খেয়েছি। এ রকম সন্ত্রাসী হামলা অন্যান্য দেশে হলেও তাতে পর্যটনের ওপর প্রভাব পড়েনি। কিন্তু, বাংলাদেশের ঘটনাগুলো বেশি আলোচিত হয়েছে। সম্প্রতি এ অবস্থার উন্নয়নে আমরা ব্রেক থ্রু হিসেবে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছি। আগামীতে আমরা ভালো ফল পাব আশা করি।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১৩৬টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম, যা এশিয়ার সর্বনিম্ন। নানা সহিংসতার দেশ পাকিস্তানও বাংলাদেশের চেয়ে এক ধাপ ওপরে রয়েছে। আর বাংলাদেশের নিচের দিকের দেশগুলো হচ্ছে ক্যামেরুন, বেনিন, লেসোথো, নাইজেরিয়া, মালি, সিয়েরালিয়ন, মৌরিতানিয়া, কঙ্গো, বুরুন্ডি, চাঁদ ও ইয়েমেন। তালিকার নিচের দিকে থাকা এই দেশগুলোর অধিকাংশই আফ্রিকার দেশ, যাদের আর্থিক ও নিরাপত্তার অবস্থা নিম্নমানের।

প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশ পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটি বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে ৪০তম (স্কোর ৪ দশমিক ১৮) অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কা ৬৪তম, ভুটান ৭৮তম ও নেপাল ১০৩তম অবস্থানে রয়েছে।

গত শনিবার দুপুরে এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক টুইট বার্তায় জানা যায়, চার বছরে টিঅ্যান্ডটি সূচকে ভারতের অবস্থান উন্নতি হয়েছে ২৫ ধাপ। প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যেই ভারত তালিকায় ১২ ধাপ উন্নতি করেছে, যা এবারের প্রতিবেদনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রগতি। অপরদিকে বাংলাদেশের অগ্রগতি দুই ধাপ হলেও সার্বিক অবস্থা স্থির রয়েছে দুই দশমিক ৯ পয়েন্টে। আর ২০১২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৮তম। সে হিসেবে চার বছরে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হয়েছে সাত ধাপ।

১৪টি বিষয় পর্যালোচনা করে দেশগুলোর পয়েন্ট নির্ধারণ করেছে ডব্লিউইএফ। ওইসব বিষয়ের প্রতিটিতেই আলাদা র‌্যাংকিং করেছে সংস্থাটি। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, বৈশ্বিক উš§ুক্ততা, ভ্রমণ ও পর্যটনকে অগ্রাধিকার দেওয়া, তথ্য-প্রযুক্তির সহজপ্রাপ্যতা, মানবসম্পদ ও শ্রমবাজার, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা, ব্যবসার পরিবেশ, মূল্যের প্রতিযোগিতা, পরিবেশের ভারসাম্য, বিমান পরিবহন, মাঠ-বন্দর ও পর্যটক সেবার অবকাঠামো, প্রাকৃতিক সম্পদ, সাস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ব্যবসায়িক আনাগোনা। এ বিষয়গুলোর মধ্যে পণ্যমূল্য, সড়ক-বন্দর এবং ব্যবসায়িক আনাগোনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের র‌্যাংকিং ১০০ এর নিচে রয়েছে।

তালিকার শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, কানাডা ও সুইজারল্যান্ড। প্রতিবেদন প্রকাশক সংস্থা ডব্লিউইএফ উল্লেখ করেছে, গত ১১ বছর ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান প্রধান শিল্পের অবস্থা নিয়ে বিশেষ পর্যালোচনা করছে। এরই অংশ হিসেবে তারা পর্যটন শিল্পকেও গুরুত্ব দিয়েছে। এর মাধ্যমে পর্যটন শিল্পে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছে।

প্রতিবেদনের মূল প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকলেও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সার্বিক পর্যটন অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। বিশ্বে প্রটেকশনিজম ও বাণিজ্য-বাধা বৃদ্ধির প্রবণতা থাকলেও দেশগুলোর জনগণের মধ্যে দেয়াল তৈরি না হয়ে সেতুবন্ধন সৃষ্টির আগ্রহ বাড়ছে। এ অবস্থায় যোগাযোগ বৃদ্ধি দেশগুলোর জন্য আবশ্যক হয়ে পড়েছে। এত কিছু সত্ত্বেও প্রতিবেদনে টেকসই পর্যটন ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিশেষ সাবধানতার আহ্বান করা হয়েছে।