নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে যেমন অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে, তেমনি শিল্প-সংস্কৃতির আদান-প্রদানে মানুষকে করে তুলবে উদার।
কিন্তু বাংলাদেশে এ খাতটি এখনো কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছায়নি। নিরাপত্তাহীনতা, সুযোগ-সুবিধাসহ নানা করণে পিছিয়ে রয়েছে দেশের পর্যটন খাত। তাই এ খাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন উদ্যোক্তাসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগ।
গতকাল শুক্রবার ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস, ২০২৪’ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনের শৈলপ্রপাত হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তরা এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। বিশ্ব পর্যটন দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিলÑ?‘পর্যটন শান্তির সোপান।’ বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম নাসরীন জাহান।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফাতেমা রহীম ভীনার স্বাগত বক্তব্যে মুখ্য আলোচক ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া ও ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি (অতিরিক্ত আইজিপি) মো. আবু কালাম সিদ্দিক। এছাড়া মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপনা করেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের।
স্বাগত বক্তব্যে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফাতেমা রহীম ভীনা বলেন, পর্যটন শুধু নিছকই বিনোদন বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নয়, এটি অর্থনীতিরও একটি বিষয়। আমাদের দেশে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা আছে। পর্যটন শান্তির সোপানÑএ প্রতিপাদ্য অন্তরে ধারণ করে আমরা আমাদের পর্যটনশিল্পকে বিকশিত করব।
মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপন করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, আমাদের পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সমাজে শান্তি না থাকলে পর্যটনশিল্প বিকশিত হয় না। তাই পর্যটনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সমাজে শান্তির প্রয়োজন রয়েছে। পর্যটন বৃদ্ধি পেলে বেকারত্ব হ্রাস পাবে, অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। পাশাপাশি সংস্কৃতি আদান-প্রদান হবে। সমাজে স্থিতিশীলতা আসবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া বলেন, বেসরকারি খাতের সঙ্গে মিলে আমরা আমাদের পর্যটনশিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। আমরা যদি আমাদের বিমানবন্দরের অবকাঠামোগুলো আরো উন্নত করতে পারি, তাহলে আমাদের পর্যটনশিল্প এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের দেশে পর্যটকরা নিরাপদ বোধ করেন না বলে ঘুরতে আসেন না। ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি (অতিরিক্ত আইজিপি) মো. আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে বিকশিত করতে বিভিন্ন অংশীদারদের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করে চলেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ দিনরাত পরিশ্রম করছে। তবে আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। আমরা এ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে ভবিষ্যতে আমাদের এ খাতকে আরও বিকশিত করতে চাই। দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনা বিরাজমান। কিন্তু এ বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা এ খাতে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা। দেশীয় পর্যটন বিকাশের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে প্রচার-প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি এ শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সঠিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পর্যটনশিল্প অন্যতম ভূমিকা পালন করতে পারবে।
এ সময় তিনি দেশের পর্যটনশিল্পের বিকাশে ইমিগ্রেশন পুলিশকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিদেশি পর্যটকরা বিমানবন্দরের মাধ্যমেই দেশে আসেন। কিন্তু সেখানে তারা ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে ভালো ব্যবহার পান না। বিমানবন্দরে ভালো ব্যবহার পেলে বিদেশি পর্যটক আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশও যদি ঘুরতে বের হয়, তাহলে ১৬ লাখ পর্যটক পাব আমরা। কিন্তু এ বিশালসংখ্যক মানুষের জন্য কি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আমাদের দেশে রয়েছে? এটি আমাদের বাড়াতে হবে। এতে আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব নাসরীন জাহান বলেন, পর্যটনশিল্পকে ঘরের কোনা থেকে শুরু করে সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে উদ্যোক্তাসহ সরকারি-বেসরকারি সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। পর্যটন ব্যক্তি মানুষকে বিশাল করে তোলে। পর্যটন মানুষের জীবনের আত্মশুদ্ধি করে। কারণ পর্যটনের মাধ্যমে একজন মানুষ অন্য মানুষের সঙ্গে মিলছে, অন্য ভাষার মানুষের সঙ্গে মিলছে, অন্য সংস্কৃতি, অন্য খাওয়া-দাওয়াÑসবকিছুর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। যখন একজন মানুষ অন্য দেশ, ভাষা, সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশবে, তখন সে অনেক উদার হবে। আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে পর্যটন খাতকে বিশ্বের দোরগোড়ায় নিয়ে যাব।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বলেন, পর্যটন ও শান্তি একে অন্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একটি দেশের পর্যটন না থাকলে শান্তি যেমন আসে না, তেমনি শান্তি না থাকলে পর্যটকও আসে না। তাই পর্যটনের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অপরিহার্য। পর্যটন অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে, যা দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জিডিপির প্রবৃদ্ধিসহ মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা হ্রাসে ভূমিকা রাখে। স্থানীয় অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে পর্যটন অনেকের জীবিকা নির্বাহের উৎসও হয়। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন পারস্পরিক স্বার্থ-সম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ প্রজšে§র উন্নতির জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে যেকোনো উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানায়।
এর আগে সকালে ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস, ২০২৪’ উপলক্ষে পর্যটন ভবনের সামনে একটি র্যালির আয়োজন করা হয়।