‘গ্যাসের দাম ৭৭% বৃদ্ধির প্রস্তাব যাচ্ছে বিইআরসিতে’ শিরোনামে যে খবর ছাপা হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। জানামতে, গ্যাস বিতরণকারী সংস্থাগুলো বর্তমানে সরবরাহ করছে দৈনিক সাড়ে ৭৬ মিলিয়ন ঘনমিটার; প্রতিঘনমিটার হিসেবে যার বাজারমূল্য ছয় টাকা ৬৪ পয়সা। এদিকে সম্প্রতি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখন মধ্যপ্রাচ্যের যে বাজার থেকে গ্যাস সংগ্রহ করা হবে, সেটি স্থানীয় গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছুতে ঘনমিটারপ্রতি দাম ২৫ টাকা ৪৬ পয়সা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের অনুমান। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশুদ্ধ এলএনজির ইউনিটপ্রতি বিক্রয়মূল্য নিজস্ব গ্যাসের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। সেজন্য সাময়িক সিদ্ধান্ত হলো, নিজস্ব গ্যাস ও এলএনজির সংমিশ্রণ গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা। তবে এলএনজির উচ্চমূল্যের কারণে মিশ্রণ হওয়া সত্তে¡ও সেক্ষেত্রে গ্যাসের দাম হতে পারে ১২ টাকার কাছাকাছি। আমাদের প্রতিবেদক বলছেন, এ ভাবনা থেকেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে মূল্য সমন্বয় সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠাতে যাচ্ছে গ্যাস বিতরণ সংস্থাগুলো। এদিকে অনেকের নিশ্চয়ই মনে রয়েছে, গত এপ্রিল ও জুনে দুই দফা বেড়েছে গ্যাসের দাম; বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির গণশুনানি এখনও চলমান। এ অবস্থায় জনগণের পক্ষে উভয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির বাস্তবতা মেনে নেওয়া যে কঠিন, তা সহজে অনুমেয়। এও বিবেচ্য, আমরা শখ করে এলএনজি আমদানি করতে যাচ্ছি না। পারিপার্শ্বিকতাই বাধ্য করেছে। ফলে এলএনজি আমদানি করব না, সেটি কোনো সমাধান নয় এক্ষেত্রে। তবু খেয়াল রাখা উচিত, দর কষাকষির মাধ্যমে যাতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যথাসম্ভব কম ব্যয়ে গ্যাসটি আমদানি করা যায়। তদুপরি এলএনজির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যথাসম্ভব কম ব্যয়ে (অবশ্যই মানে ছাড় না দিয়ে) নির্মাণ করতে এবং নির্মিত কাঠামোর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণে যত্নবান হতে হবে। সেসবের সুপ্রভাব গ্যাসের দাম সমন্বয়ের বেলায় অনুভ‚ত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
মাথায় রাখা দরকার, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে মানে এই নয় যে, বিতরণ কোম্পানিগুলো এখনই গ্যাসের দাম বাড়াতে চায়। বরং অনুমান করা হচ্ছে, তারা আগেভাগেই বিস্তারিতভাবে আলোচনা সেরে রাখতে চায় যেন আগামী মার্চ থেকে গ্যাসের দাম সমন্বয় সম্ভব হয়। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম এখনও ঠিক হয়নি। ফলে এখন যে দাম ধরে সমন্বয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেটি পুরোপুরি সম্ভাব্য দাম। প্রকৃতপক্ষে দামটি এ প্রাক্কলনের কম বা বেশি হতে পারে। কারও কারও অনুমান, কিছুটা হলেও দামটি প্রাক্কলিত দামের চেয়ে কম হবে। কম হলেও দাম সমন্বয় ঠিকই করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা চাইব, বৃহৎ ও মাঝারি গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম সহনীয় মাত্রায় রাখা হোক। ক্ষুদ্র গ্রাহকের প্রতিও দেওয়া হোক যথাযোগ্য মনোযোগ। লক্ষণীয়, ক্ষুদ্র গ্রাহক পর্যায়ে এখন দেশজুড়ে এলপি গ্যাস বিস্তার লাভ করেছে। তাছাড়া গ্যাস পরিভোগের সামগ্রিক চিত্রে ক্ষুদ্র তথা বাসাবাড়ির আনুপাতিক অংশ সবচেয়ে কম। সুতরাং বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র এ তিন স্তরে পর্যায়ভিত্তিক সহনীয় মাত্রায় গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হবে, সেটাই প্রত্যাশিত। সেক্ষেত্রে এলপি গ্যাসে ভর্তুকি বাড়ানো যেতে পারে। বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা গ্যাসের দামেও সঙ্গতি রক্ষা করা চাই। তাতে শিল্পপর্যায়ে খানিকটা দাম বৃদ্ধির কারণে পরোক্ষভাবে কিছু পণ্যের মূল্য বাড়লেও সার্বিকভাবে গ্যাসের দাম জনগণের পক্ষে সহ্য করা সহজ হবে বলেই ধারণা।