পর্ষদের অনিয়মে বিআইএফসির খেলাপি ৬২০ কোটি টাকা

পলাশ শরিফ: বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) মোট ঋণের প্রায় ৯৫ শতাংশই খেলাপি। পরিচালনা পর্ষদের যোগসাজশে নিয়ম ভেঙে সানম্যান গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ৩১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ায় খেলাপি ঋণ ৬২০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ ঋণ আদায় না হওয়ায় নিয়ম মেনে প্রভিশন রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, ঋণের নামে প্রায় বিআইএফসি থেকে ৭০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন কোম্পানিটির উদ্যোক্তা অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান। তার সানম্যান গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও অন্য পরিচালকদের নামে জালিয়াতি করে ওই ঋণগুলো নেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে নিয়ম ভেঙে ঋণ নেওয়া শুরু হলেও ওই জালিয়াতি ধরা পড়ে ২০১৫ সালে। জালিয়াতি ফাঁস হওয়ার আড়াই বছরে ওই অর্থ ফেরত পায়নি বিআইএফসি। মোট ঋণের প্রায় ৯৫ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়ায় লাভজনক অবস্থা থেকে লোকসানে জড়িয়েছে কোম্পানিটি।
বিআইএফসির কোম্পানি সচিব আহসান উল্লাহ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সাবেক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের প্রতিষ্ঠানের কাছেই মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ আটকে গেছে। এসব নিয়ে একাধিক মামলাও চলছে। তারপরও খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না। তারল্য সংকটে পড়ে বিআইএফসি তিন বছর ধরে লোকসান গুনছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ আর্থিক বছরে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তাই লোকসান অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।’
তথ্যমতে, ১৯৯৮ সালে পথচলা শুরুর পর থেকেই লাভজনক অবস্থানে ছিল বিআইএফসি। কোম্পানিটি ২০১৪ সাল পর্যন্ত মুনাফা করেছে। এরপর বড় অঙ্কের অর্থ বেরিয়ে যাওয়ায় ২০১৫ সালে প্রায় ৬২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে বিআইএফসি। এরপর গত তিন বছরে প্রায় ৮২৫ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রায় ৬২০ কোটি টাকা প্রভিশন রাখতে গিয়ে সর্বশেষ এক আর্থিক বছরেই প্রায় ৭০০ কোটি ১৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। আর আয়-মুনাফায় বড় ধসের কারণে কোম্পানিটির প্রতি গ্রাহকদের আস্থার ঘাটতি চলমান সংকটকে আরও প্রকট করেছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ছয় মাসে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা পরিচালন লোকসান গুনেছে বিআইএফসি।
দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সানম্যান গ্রুপের কর্ণধার অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান, তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নান, সাবেক পরিচালক রইস উদ্দিন, রফিক উদ্দিন, মহিউদ্দিন, আকবর হোসেন, আবদুল ওহাব ও আয়েশা খানম নিজ নিজ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। ঋণের তথ্য গোপন, অনিয়ম ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি ছাড়াই ঋণ নেওয়া হয়েছে। ঋণ নেওয়া কোম্পানির অধিকাংশই সানম্যান গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। ঋণের নামে নেওয়া অর্থ বিভিন্ন সময়ে ওই গ্রুপের ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করা হয়েছে। ২০১৫ সালে জালিয়াতির তথ্য পাওয়ার পর বিআইএফসির পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তিন বছর পরও জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া ঋণগুলো আদায় হয়নি। বরং ৩১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা বিআইএফসির প্রায় ৬২০ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে। আর ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ প্রায় ৬২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, কয়েকজন বিদেশি উদ্যোক্তাকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৯৮ সালে বিআইএফসি প্রতিষ্ঠা করেন সানম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব) আবদুল মান্নান। ২০০৬ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির ১০ কোটি ছয় লাখ শেয়ারের মধ্যে ৩৭ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৬ দশমিক ১৭ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। লোকসানের কারণে ২০১৩ সালের পর থেকে কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না বিআইএফসি। ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারদরও এখন অভিহিত মূল্যের নিচে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০