স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার কারিগর মো. শফিক। এর স্বাক্ষর রেখেছেন পলিথিন দিয়ে জ্বালানি তেল তৈরি করে।
রাঙামাটির দুর্গম বাঘাইছড়ি উপজেলায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন শফিক। পেশায় ট্রাক্টর চালক। এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। বিদ্যালয়ের চৌকাঠ পার হতে পারেননি। স্বাক্ষরজ্ঞান আছে শুধু। কিন্তু তার জ্ঞান আহরণের ক্ষুধা মেটেনি। তাইতো প্রযুক্তিবিদ্যার খবর রাখতেন নিয়মিত।
পরিবেশ দূষণে বিশেষ ভূমিকা রাখছে পলিথিন। এ দূষণ রোধের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তাই এ পলিথিনকে কোনো কাজে লাগানো যায় কি নাÑতা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। যে চিন্তা সেই কাজ। ইন্টারনেটে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন। একসময় পেয়ে যান তার স্বপ্ন বুননের পথ।
তিনি দেখেন, চীনা নাগরিকরা পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিকের কৌটা দিয়ে নানা ধরনের শোপিস তৈরি করে। এ থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, পরিত্যক্ত পলিথিন দিয়ে জ্বালানি তেল তৈরি করবেন।
স্ত্রীর কানের দুল ও জমানো কিছু টাকা দিয়ে উপজেলার মাস্টারপাড়া গ্রামের পুরাতন মারিশ্যা জামে মসজিদের এক শতক জায়গা ভাড়া নিয়ে নিজের স্বপ্ন বুননের কাজ শুরু করেন।
কাঁচাপণ্য হিসেবে পরিত্যক্ত পলিথিন, নানা রকম প্লাস্টিকের কৌটা সংগ্রহ শুরু করলেন। জ্বালানির জন্য লাকড়ি ও তেল উৎপাদনের প্রাথমিক যন্ত্রপাতি কেনেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান শফিক। মেধা ও বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমি অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেল তৈরি করছি। তার উৎপাদিত প্রতি লিটার অকটেন ৫৫ টাকা, পেট্রোল ৭০ টাকা, ডিজেল ৫৫ টাকা ও কেরোসিন ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি পলিথিন পুড়িয়ে ৭০০ গ্রাম তেল তৈরি করা যায়। এসব জ্বালানি তেল তৈরি করতে বিদ্যুৎ খরচ হয় না, প্রয়োজন শুধু আগুন। তিনি প্রতিদিন ৩০ লিটার জ্বালানি তেল তৈরি করেন। স্থানীয়রা এ তেল ব্যবহার করছেন।
সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা তার প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে শফিক বলেন, আমি এ প্রকল্পটি আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে চাই। এজন্য অনেক যন্ত্রপাতি দরকার। তাহলেই গ্যাস ও বিশুদ্ধকরণ সাদা কেরোসিন সরবরাহ করতে পারব। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো গেলে দুর্গম এ উপজেলায় একটি কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে। এতে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে। এজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মঈন উদ্দীন বাপ্পী, রাঙামাটি