শিপন আহমেদ: ঘুরে বেড়াতে কার না ভালো লাগে? বিশেষ করে ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম ও ব্যস্ততা থেকে প্রায়ই ছুটি নিতে চায় মন। পছন্দমতো কিছু দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করে। কিন্তু উপায় নেই। সময় বের করা কষ্টকর।
অনেক দিন ধরে যাব যাব করেও যাওয়া হচ্ছে না। এমন সময় ডাক পেলাম ফোরহাত হোসেন ভাইয়ের। যেমন বলা তেমন কাজ। তার উৎসাহে আমরা দুই বন্ধু ফরিদপুরে পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। জায়গাটি বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ কবির বাড়ি ও জসীম মেলা দেখার ইচ্ছা ছিল অনেক দিন ধরে।
ফোরহাত ভাই, বন্ধু আরাফাত হোসেন ও আমিÑদলে আমরা তিনজন। রাজধানী থেকে এ রুটে সরাসরি কোনো বাস চলাচল করে না; তাই টিকিটের কোনো ঝামেলা নেই। চলতি বছরের শুরুতে আমরা ফরিদপুরে যাই। ওখানে আমার খালার বাড়ি। দিনটি এখানে কাটাই।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সকালের নাস্তা সেরে আমাদের মূল গন্তব্য পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের বাড়ি। খালার বাসা থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ। ভ্যানে চড়ে কবির বাড়ি চলে আসি। বাড়িটি দেখে মন জুড়িয়ে যায়। অনেক সুন্দর জায়গা। পুরো বাড়ি ঘুরে দেখা শুরু করি। আমরা তার বাড়ি, কবরস্থান, রুপাই ছায়াঘর ঘুরে দেখি। কবির বাড়িটি কুমার নদের তীরে অবস্থিত। এখানের সৌন্দর্য ও চার পাশের মনোরম পরিবেশ ভীষণ ভালো লাগে। চারদিকে গাছপালা, বাগান, পাখির কিচিরমিচির শব্দ। প্রকৃতির সঙ্গে কবির নিবিড় সম্পর্ক ছিলÑএখানে এসে সে ধারণা পাই। তিনি অনেক গাছ লাগিয়েছিলেন। গাছগুলো এখন বেশ বড় হয়েছে। পুরো বাড়িটিই যেন প্রকৃতির প্রতি কবির মমত্ববোধের প্রতিচ্ছবি।
মজার ব্যাপার, ওই সময়টায় পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের ‘স্মরণোৎসব মেলা’ চলছিল। কবির জš§ভিটা অন্বিকাপুরে প্রতিবছরের ১ জানুয়ারি এ মেলা বসে। চলে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেলার প্রধান আকর্ষণ পল্লিগীতি ও বিচার গানের আসর। মেলায় থাকে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি, মাটির হাঁড়ি, পুতুল, লোহা, বাঁশ ও বেতের নানা সামগ্রী। খাবারের মধ্যে থাকে বৈচিত্র্যময় মিষ্টি ও ঝালযুক্ত পেঁয়াজু, মোগলাই, সিঙাড়া, পুরি প্রভৃতি। মেলা ঘিরে পুতুলনাচ ও মৃত্যুকূপ সার্কাসের আয়োজন করা হয়। ওইদিন কবির জীবনী নিয়ে আলোচনা সভা ও কবিতা আবৃত্তির আসর বসে।
এ বাড়ির বাইরে একটি পর্যটন স্পট রয়েছে। সেখানে বিকালে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। পাশেই রয়েছে একটি মাঠ। দর্শকদের বসার জন্য মাঠের পাশে সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। মেলা দেখতে দেখতে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেছে টেরই পেলাম না। তাই মাঠের পাশে বসে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করি।
ভ্রমণ শেষে আমরা খালার বাসায় যাই। পরদিন বাসে চড়ে আবার ফিরে আসি রাজধানীতে।
Add Comment