নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতির অভিযোগে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) দুই কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে এসব কর্মকর্তাকে তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ নিয়ে দৈনিক শেয়ার বিজে খবর প্রকাশের একদিন পরই সংস্থাটির দুই কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
যেসব কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তারা হলেনÑপল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের অতিরিক্ত পরিচালক (মাঠ পরিচালনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক) আমিনুল ইসলাম এবং নীতি ও পরিকল্পনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক ড. মো. মনারুল ইসলাম।
পিডিবিএফ সূত্রে জানা গেছে, কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি যদি অসৎ কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার সত্যতা প্রমাণ হয়, তাহলে চাকরির প্রবিধান অনুযায়ী বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেওয়া হয়। যেহেতু এ দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, এ কারণেই চাকরির প্রবিধিমালা মোতাবেক তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের তিন মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে।
পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মদন মোহন সাহা স্বাক্ষরিত দুই কর্মকর্তার অব্যাহতির বিষয়ে পৃথক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, পিডিবিএফ কর্মচারী প্রবিধানমালা ৩/২০১১-এর ৬১(২) মোতাবেক তিন মাসের মূল বেতনসহ গত ১৭ এপ্রিল কার্যদিবস শেষে তাদের চাকরি থেকে অবসায়ন ঘটানো হলো। তবে তাদের চূড়ান্ত পাওনা প্রধান অফিস থেকে গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত পরিচালক মো. আমিনুল হক বলেন, বিধি অনুযায়ী
কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসৎ কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগ থাকলে এভাবে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাদের ক্ষেত্রেও অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ব্যবস্থা নিয়েছে পিডিবিএফ। এর আগে পিডিবিএফের অব্যাহতিপ্রাপ্ত দুজনসহ ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের গত ১৬ এপ্রিল থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। আজও একাধিক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমানসহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাদের দুদক কার্যালয়ে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কমিশনের উপপরিচালক শেখ মেসবাহ উদ্দিন তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে।
যেসব কর্মকর্তাদের কমিশন তলব করেছে তারা হলেনÑপিডিবিএফের যুগ্ম পরিচালক বথিন বড়াল, অতিরিক্ত পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম, নীতি ও পরিকল্পনা বিভাগের ড. মো. মনারুল ইসলাম, অতিরিক্ত পরিচালক আনোয়ারুজ্জামান, যুগ্ম পরিচালক (অর্থ) শহিদুল হক খান, মানবসম্পদ ও উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. সোলায়মান, অতিরিক্ত পরিচালক মুহিউদ্দিন পান্নু, আইটি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সহিদ হোসেন সেলিম।
জানা গেছে, অবৈধ নিয়োগ ও দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হয়েছেন পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুবুর রহমান। পিডিবিএফের তদন্তে তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়। এ কারণে তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে পিডিবিএফ পর্ষদের ৬৯তম সভায় তাকে এমডি পদ থেকে অপসারণ করা হয়। পরে দুদক তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত শুরু করে। যার মধ্যে মো. মাহবুবুর রহমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে তার অফিস থেকে নগদ নয় লাখ ২০ হাজার টাকা উদ্ধারসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কৌশলে চুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদকে তিনি নিজেই স্থায়ী করে নেন। এরপর মাহবুবুর রহমান বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। দায়িত্ব পালনকালে মাহবুব পরিচালনা পর্ষদকে না জানিয়ে অসংখ্য নিয়োগ-পদোন্নতি দেন ও নিজে বিলাসবহুল গাড়ি কেনেন। তার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার ঋণ লোপাট, দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও গেজেট জালিয়াতিসহ অসংখ্য অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তার সঙ্গে একাধিক কর্মকর্তার জড়িত থাকার বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে। এর অংশ হিসেবে ওইসব কর্মকর্তাদের কমিশনে তলব করা হয়েছে।
Add Comment