Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 12:30 pm

পশুখাদ্যের নামে গুঁড়োদুধ আমদানি করেছে এগ্রো কনসার্ন

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: মিথ্যা বর্র্ণনা ও অসত্য এইচএস কোড ঘোষণা দিয়ে পশুখাদ্যের নামে গুঁড়োদুধ আমদানি করে এগ্রো কনসার্ন নামে এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। ঢাকার এই আমদানিকারক চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি উত্তর ইউরোপের দেশ এস্তোনিয়া থেকে ২৫ মেট্রিক টন গুঁড়োদুধ আমদানি করে। এই আমদানিকারক বিল অব এন্ট্রিতে আমদানি করা পণ্য পশুখাদ্য হিসেবে ঘোষণা দেয়, যা বিনা শুল্কে খালাস করা হয়। তবে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাসায়নিক পরীক্ষায় এটি ধরা পড়ে মানুষের খাদ্যে ব্যবহƒত গুঁড়োদুধ হিসেবে, যা ক্রয়কৃত মূল্যের ৯০ শতাংশ হারে শুল্কযোগ্য।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের ইনচার্জ মো. হান্নান জানান, এই আমদানিকারক পণ্যে আমদানির বিবরণে পশুখাদ্য উল্লেখ করলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলো মানুষের খাদ্যে ব্যবহƒত গুঁড়োদুধ। আমদানি করা এই দুধে এনিম্যাল ফ্যাট বের করে ভেজিটেবল ফ্যাট সংযোজন করা হয়েছে। এই দুধ বেকারি খাদ্য থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের খাদ্যে ব্যবহার করা যাবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, এস্তোনিয়া থেকে আমদানি করা একটি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ২৫ মেট্রিক টন (১০০০ বস্তা) গুঁড়োদুধ আমদানি করে এগ্রো কনসার্ন। এই প্রতিষ্ঠান বিল অব এন্ট্রিতে পণ্যমূল্য দেখায় ৫১ হাজার ২৫০ ইউরো, যা ৯৮ দশমিক ৭ টাকা দরে বাংলা টাকায় প্রায় ৫১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া পণ্যে এইচএস কোড দেখায় ২৩০৯.৯০.৯০ এবং পণ্য বিবরণে রিভেলক (ৎবাধষধপ) ৫৫ পশুর খাদ্য, যা বিনা শুল্কে ছাড় করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই পণ্যের এইচএস কোড ১৯০১.৯০.৯০ যা ৯০ শাতাংশ হারে শুল্কায়নযোগ্য।

এছাড়া এই আমদানিকারক প্রতি মেট্রিক টন পণ্যে মূল্য দেখিয়েছে প্রায় দুই হাজার ইউরো করে, যা প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক বাজারে তিন হাজার ২০০ মার্কিন ডলারের অধিক। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম অনুসারে এই পণ্যের প্রকৃত মূল্য দাঁড়ায় ৬৫ লাখ টাকার অধিক। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এর দাম মূল্যায়ন করেছে প্রায় ৬৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। তাছাড়া শুল্ক মূল্য ৭২ শতাংশ ধরে ৫৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা রাজস্ব ধরা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার ড. একেএম নুরুজ্জমান শেয়ারবিজকে বলেন, আমরা ৬১টি চালানকে পরীক্ষার জন্য শনাক্ত করি। এর মধ্যে একটি চালান ধরা পড়ে। এই চালানের মোট শুল্কায়ন মূল্য প্রায় ৬৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। এছাড়া অসত্য এইচএস কোড ঘোষণায় পণ্য আমদানি করায় রাজস্ব ফাঁকির সম্ভাবনা ছিল প্রায় ৫৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। ওই চালানটিকে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করাসহ জরিমানা করা হয়েছে।

এদিকে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, অসত্য ঘোষণায় আমদানিকারক পণ্য চালান করায় এই আমদানিকারকের ওপর কাস্টমস আইন ১৯৬৯-এর সেকশন ১৬ লঙ্ঘনসহ সেকশন ৩২ মোতাবেক অসত্য ঘোষণার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তাই এই আমদানিকারকের পণ্যেও চালানটি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণসহ ওই আমদানিকারকের ওপর ৩৪ লাখ টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা হয়েছে। তবে পণ্যগুলো অবাধে আমদানিযোগ্য বলে পাঁচ লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। তবে আমদানিকারকের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মালিক নিজেও অসত্য ঘোষণার অপরাধ স্বীকার করেছেন।

এই আমদানিকারকের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান চিত্রা ইম্পেক। চট্টগ্রামের এই প্রতিষ্ঠানে এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, আমরা এই বিষয়ে কিছুই জানতাম না। আমাদের ফাঁসানো হয়েছে। এছাড়া এই চালানের সহযোগী ব্যাংক হিসেবে কাজ করেছে সাউর্থ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড।