Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 12:41 am

পশ্চিমবঙ্গে ধরাশায়ী মোদির বিজেপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনার শুরুতে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার আভাস থাকলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের বড় জয় স্পষ্ট হচ্ছে। আর ধরাশায়ী হয়েছে মোদির বিজেপি।

ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বলছে, বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিধানসভার ভোট হওয়া ২৯২টি আসনের মধ্যে ২৮৮টির ভোট গণনায় ২০৩ আসনে তৃণমূল আর ৮১টিতে বিজেপি এগিয়ে ছিল।

কলকাতার কালীঘাটে মমতার বাড়ির কাছে তৃণমূলের জোড়া ফুলের শিবিরে দুপুর থেকেই আনন্দ শুরু হয়ে গেছে। অন্যদিকে পদ্মফুলের বিজেপির গেরুয়া শিবিরে আঙুল তোলা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকে। দুপুরে আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের শিরোনাম ছিলÑ‘দিদিই ফিরছেন’; আর এনডিটিভি’র শিরোনামÑ‘সুপার ভিক্টরি ফর তৃণমূল’।

গতকাল রোববার পশ্চিমবঙ্গের পাশপাশি ভারতের আরও তিনটি রাজ্য আসাম, তালিমনাডু ও কেরালা এবং কেন্দ্রশাসিত পদুচেরির বিধানসভা নির্বাচনেরও ভোট গণনা হচ্ছে।

ভারতজুড়ে কভিড-১৯ সংক্রমণের মধ্যে গণনাকেন্দ্রগুলোয় কঠোরভাবে সতর্কতাবিধি পালনের মাধ্যমে ভোট গণনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। গণনা কেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

প্রাথমিক ভোট গণনায় আসামে বিজেপি স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছে, তামিল নাডুতে ডিএমকে বিজয় উৎসব শুরু করে দিয়েছে এবং কেরালায় সিপিএমের নেতৃত্বধীন জোট এলডিএফ ফের ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে বলে আভাস মিলেছে।

১০ বছর আগে বাম রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের শাসন কায়েম করেছিলেন মমতা। ২০১৬ সালেও সেই ধারায় ছেদ পড়েনি। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরই রাজ্যে বিজেপির শক্তিশালী অবস্থান ধরা পড়ে। সেবার এ রাজ্যে ১৮টি আসন পায় নরেন্দ্র মোদির দল।

এবারের বিধানসভা নির্বাচন ছিল বিজেপির জন্য বাংলা দখলের লড়াই। আর সে চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেখানে বেশ কয়েকটি জনসভা করেন মহামারির মধ্যে।

এদিকে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিন পায়ে চোট পেয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। কয়েক দিন হাসপাতালে থেকে ভোটের প্রচারের পুরোটা সময় তিনি হুইলচেয়ারে ছুটে বেরিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের এমাথা-ওমাথা।

মমতার ‘খেলা হবে’ শব্দবন্ধ নিয়ে মোদির কথার কলাকুশলের জন্য নির্বাচনের আগে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। প্রবল মেরূকরণের এ নির্বাচন পরিণত হয় মূলত ‘মমতা বনাম মোদি’ যুদ্ধে।

পশ্চিমবাংলার এবারের ভোট নিয়ে মাঠের লড়াইয়ের পাশাপশি সরব ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো। বিজেপিবিরোধী পক্ষ যেমন সরব ছিল, তেমনি মমতার বিপক্ষেও নানা মাধ্যমে জোর প্রচারণা চালিয়েছে বিজেপি। পক্ষে-বিপক্ষে গান তৈরি করেও আক্রমণ শানিয়েছেন একে অপরের বিরুদ্ধে।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ভোট হয়েছে ২৯২টি আসনে। সাত কোটি ৩২ লাখ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন প্রায় ৮১ শতাংশ। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে গেলে এ রাজ্যে পেতে হবে ১৪৮টি আসন। নির্বাচনের পর বেশিরভাগ বুথফেরত সমীক্ষায় তৃণমূলই এগিয়ে ছিল।

আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, ভারতের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তাতে এখন ‘উচ্ছ্বাস’ দেখানোর সময় নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

এই তৃণমূল নেতা বলেছেন, ‘এই জয়ে কোনো বিজয় মিছিল হবে না। এটা আনন্দ করার সময় নয়। রাজ্যে কত মানুষ মারা যাচ্ছেন। আমার নিজের অনেক আত্মীয় মারা গেছেন। এমনকি যারা আমাকে ভোট দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই নেই। এই অবস্থায় বিজয় মিছিল বা আনন্দ করার মতো মানসিক অবস্থা নেই আমার।’

অন্যদিকে রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতার বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ‘জেলায় জেলায় অন্য রাজ্য থেকে আসা পর্যবেক্ষকরা স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি অবিশ্বাস দেখিয়েছেন। বাংলার রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও নিজেদের রাজ্যের অভিজ্ঞতা বাংলায় প্রয়োগ করতে চেয়েছেন। বারবার বলেও কাজ হয়নি। যে ফল হতে চলেছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, সেটা ঠিক হয়নি।’

তবে কে সেই নেতা, সে নাম প্রকাশ করেনি আনন্দবাজার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের নাম উচ্চারণ না করে ওই নেতা বলেন, ‘সেনাপতি হয়েছিলেন যারা, জিতলে তারা কৃতিত্ব নিতেন। এখন হারের দায়ও নিতে হবে।’

এদিকে মমতা বন্দোপাধ্যায়েকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন, সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব। তিনি লিখেছেন, ‘বাংলার সচেতন নাগরিকরা বিজেপির ঘৃণার রাজনীতিকে হারিয়েছেন। মানুষের সেবায় ব্রতী পরিশ্রমী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের নেতাদের শুভেচ্ছা।’

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের সবার মনোযোগ এখন নন্দীগ্রামের দিকে। কারণ এখান থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর দুপুর পর্যন্ত তিনি পিছিয়ে আছেন বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর চেয়ে।

একসময় মমতার ‘লেফটেনেন্ট’ হিসেবে পরিচিত শুভেন্দু এবারই প্রথম পদ্মফুল নিয়ে লড়ছেন। ২০১৬ সালে এ আসনে ঘাসফুলের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হওয়া শুভেন্দু গত বছর ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন।

মমতা পিছিয়ে থাকলেও এ আসনে জয়ের ব্যাপারে জোর আশাবাদী তৃণমূল। তাদের আশা, ইভিএমের ভোট গণনা শুরু হলে নন্দীগ্রামে ‘দিদি’ এগিয়ে যাবেন।