পশ্চিমাদের বেঁধে দেয়া দাম ছাড়িয়েছে রাশিয়ান তেল

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাশিয়ার ফ্ল্যাগশিপ ইউরালস ক্রুড চলতি সপ্তাহে প্রথমবারের মতো ইইউ ও জি-সেভেন দেশগুলোর নির্ধারিত তেলের ৬০ ডলার প্রাইস ক্যাপ (বেঁধে দেয়া দাম) অতিক্রম করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোয় রাশিয়ার তেল রপ্তানি কমানোর লক্ষ্যে তেলের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি কার্যকর করা হয়েছে। খবর: সিএনএন।

গত ১২ জুলাই ইউরালস স্পট প্রাইস ৬০ দশমিক ১৮ ডলারে পৌঁছেছে। একই সময়ে প্রিমর্স্ক ও নভোরোসিস্ক লোডেড কার্গোগুলোর প্রতি ব্যারেলের দাম হয়েছে ৬০ দশমিক ৭৮ ডলার।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জি-সেভেন ও জোটগুলোর সহযোগী দেশগুলো গত বছরের ডিসেম্বরে রাশিয়ান তেল নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করলে ওয়েস্টার্ন শিপিং, ইন্স্যুরেন্স ও রি-ইন্স্যুরেন্স সংস্থাগুলোকে রাশিয়ান তেলবাহী কার্গো পরিবহন ও পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয়।

রাশিয়ান পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের ওপরও গত ফেব্রুয়ারিতে একই ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। প্রাইস ক্যাপ মেনে চলা গ্রাহকদের কাছে রাশিয়ার তেল, পেট্রোলিয়াম ও পরিশোধিত পণ্য বিক্রিতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া।

ইউক্রেনে হামলার জেরে মস্কোকে চাপে ফেলার অংশ হিসেবে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের দাম বেঁধে দিতে সম্মত হয় জি-৭ ও তার মিত্র দেশগুলো। কম দামে রাশিয়ার সামুদ্রিক অপরিশোধিত তেল কেনার মূল প্রস্তাব এই শীর্ষ সাত অর্থনীতির জোটের। তাদের প্রস্তাব ছিল, বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম সামগ্রিকভাবে ৫ শতাংশ বা এর বেশি কমিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ব্যারেলপ্রতি ৬৫ ডলার থেকে ৭০ ডলার দরে তেল কিনতে হবে। পরে নানা বিতর্ক ও আলোচনায় দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০ ডলার। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা গত বছরের ডিসেম্বরে এ ঘোষণা দেন।

সমঝোতা অনুযায়ী, সমুদ্রপথে আমদানি করা রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারের বেশি দামে কেনা যাবে না। তবে ইউক্রেনের চাওয়া ছিল, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ ডলারে বেঁধে দেবে।

তেলের দাম বেঁধে দেয়ার পদক্ষেপ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, এতে রাশিয়ার আয় কমে যাবে। দেশটি অচিরে বড় ধাক্কা খাবে। ওপেক প্লাস জোট তেলের উৎপাদন কমানোর নীতিতে অটল রয়েছে। জোটের এই সিদ্ধান্ত বাজারে প্রভাব ফেলেছে। ওপেক প্লাস হলো বিশ্বের ২৩টি তেল রপ্তানিকারক দেশের জোট। এ জোটে রাশিয়াও রয়েছে। বিশ্ববাজারে কতটা অপরিশোধিত তেল বিক্রি করা হবে, তা নির্ধারণে ওপেক প্লাস নিয়মিত বৈঠক করে।

গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক তথ্য মস্কোর জন্য বিজয়ের প্রতীক। রাশিয়া তেল রপ্তানি কমাতে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে জি-সেভেন দেশগুলোর তেল কোম্পানিগুলো অল্প পরিমাণ তেল গ্রাহকদের পরিষেবা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট বড় জাহাজের শ্যাডো ফ্লিট পরিবহন নিশ্চিত করেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রাইস ক্যাপের ওপরে ইউরালসের দাম বৃদ্ধি ইউরোপ ও আমেরিকার জন্য একটি বিশাল ধাক্কা। পশ্চিমা জোট দেশগুলোয় মূল্যস্ফীতির ধাক্কা কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি সচল রাখতে তেলের পরিবহন নিশ্চিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে রাশিয়াকে চাপে রাখতে মুনাফা কমিয়ে তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

অয়েল ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, ভারতীয় তেল শোধনাগারগুলো রাশিয়ান তেলের দাম পরিশোধে ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমস্যায় জড়িয়েছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে চীন ও ভারতে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় বাজার তৈরি হয়েছে। তবে সাম্প্র্রতিক সময়ে দাম পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ভারতীয় ক্রেতাদের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে বলে শঙ্কা জানিয়েছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার ভয়ে ভারতীয় ব্যাংকগুলো গত কয়েক মাস আমদানি করা তেলের দাম পরিশোধে বেশ সতর্ক ছিল। তেল শোধনাগার মালিকদের বোঝাতে হবে, তাদের কেনা পণ্যগুলোর দাম ৬০ ডলারের নিচে ছিল।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০