পাঁচ কারণে বাজার চাঙা 

 

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকায় সম্প্রতি তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে অন্যান্য খাতের কোম্পানির শেয়ারদর। বেড়েছে লেনদেনের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজারে এখন স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। আর এর পেছনে একাধিক কারণও রয়েছে। এর মধ্যে দুই শতাধিক কোম্পানির আর্থিক বছর শেষ হওয়া, নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা, বিদেশিদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মুনাফা ও নতুন অর্থবছরে আইসিবির সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের খবরÑএসব কারণে বাজার চাঙা হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে পুঁজিবাজার চাঙা হলেও বিনিয়োগকারীদের মনে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। তারা বলছেন, তাদের প্রত্যাশা একটি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার। সে জন্য হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে তারা উচ্ছ্বসিত নন।

শহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘আমরা বহুবার পুঁজিবাজারের এ পরিস্থিতি দেখেছি। কিন্তু কোনোবারই এটা দীর্ঘমেয়াদি হয়নি। সে জন্য আমরা সব সময় দোলাচলে থাকি।’

পর্যালোচনায় দেখা যায়, সম্প্রতি তালিকাভুক্ত প্রায় দুই শতাধিক কোম্পানির আর্থিকবছর শেষ হয়েছে। শিগগির এসব প্রতিষ্ঠান থেকে লভ্যাংশ ঘোষণা আসবে। যে কারণে এসব কোম্পানিতে ঝুঁকছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। যার জেরে বাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এদিকে বাজারের এমন পরিস্থিতিতে প্রতিদিনই ব্যাংকসহ বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ আসছে পুঁজিবাজারে। যা বাজারের গতিকে আরও বেগবান করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরও কিছু বিষয় পুঁজিবাজারের অগ্রগতির জন্য সহায়ক। বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। সে সঙ্গে বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ। বিষয়টি যে কোনো পুঁজিবাজারের জন্য ভালো খবর। কারণ বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়লে বাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীর আগ্রহ তৈরি হয়।

বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ লিমিডেট (আইসিবি) সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা এ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।

এদিকে পুঁজিবাজারের শক্তিশালী খাত হিসেবে খ্যাত ব্যাংকিং খাতের মুনাফার খবর বাজারকে ঊর্ধ্বমুখী রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। অন্যদিকে পোশাক খাতের করপোরেট ট্যাক্স কমানোর কারণে চাঙা রয়েছে এই খাত। সব মিলে চাঙা রয়েছে পুঁজিবাজার।

এদিকে বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে ডিএসইর সূচক, লেনদেন ও মূলধন।  ঈদের পর মাত্র চার কার্যদিবসের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ডিএসইতে ঈদের আগে শেষ কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ৬২৮ কোটি টাকা। গতকাল যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে এ সময়ের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭২৬-এ।

এদিকে সম্প্রতি পুঁজিবাজারে বিদেশি পোর্টফোলিওতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত মে’তে এর পরিমাণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ। আলোচ্য মাসে বিদেশি পোর্টফোলিওতে লেনদেন হয়েছে ৮৯৬ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। গত এপ্রিল মাসে যার পরিমাণ ছিল ৮৬৭ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। মে মাসে বিদেশি পোর্টফোলিওগুলোয় মোট শেয়ার ক্রয় হয়েছে ৫২৫ কোটি ৩৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। যা এপ্রিল মাসে ছিল ৪৬৮ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সে হিসেবে মে মাসে শেয়ার ক্রয়ের হার বেড়েছে ১২ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ বা ৫৬ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার। এ সময় বিদেশি পোর্টফোলিওতে শেয়ার বিক্রির চেয়ে ক্রয়ের পরিমাণ বেড়েছে ১৫৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে মৌল ভিত্তির পাশাপাশি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে কিছু দুর্বল ও ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত শেয়ারদর। যা বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখকর নাও হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন সাধারণ সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, বাজার পরিস্থিতি এখন সন্তোষজনক। তবে এ বাজার থেকে যাতে কেউ সুযোগ না নিতে পারে, সেদিকে নজর রাখা জরুরি। এজন্য বিনিয়োগকারীদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তাদের উচিত হবে নিজের পুঁজি নিরাপদে রেখে দেখে-শুনে বিনিয়োগ করা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, সম্প্রতি কোনো কারণ ছাড়াই দর বাড়ছে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত দুলামিয়া কটন, বঙ্গজ, বিচ হ্যাচারি, আজিজ পাইপস, সিনোবাংলাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। কারসাজির অভিযোগ থাকা এসব কোম্পানির লেনদেনে গতিবিধি সন্দেহের চোখে দেখছে বিএসইসি, ডিএসই, সিএসইসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেয়ারদর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে নোটিস দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ঘুরে জানা যায়, আর্থিক বছর শেষে তালিকাভুক্ত এসব প্রতিষ্ঠানের ক্যাটাগরি পরিবর্তন হবেÑবাজারে এমন গুজব রয়েছে। সে কারণে কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করতে দুবার ভাবছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কারণ এসব কোম্পানির অধিকাংশের শেয়ারদর কম। পক্ষান্তরে এসব শেয়ারের দরও বাড়ছে দ্রুত। ফলে দ্রুত ক্যাপিটাল গেইন করতে পারছেন বিনিয়োগকারীরা।  অন্যদিকে যারা  ক্যাপিটাল গেইন করতে চাইছে না তারা ভালো লভ্যাংশের  প্রত্যাশা করছেন। জানতে চাইলে ইকরামুল হাসান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, আমার কাছে খাদ্য খাতের একটি কোম্পানির শেয়ার রয়েছে। জানামতে প্রতিষ্ঠানটি এবার ‘জেড’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ফিরে যাবে। যে কারণে শেয়ারদর বাড়ছে। তবে লভ্যাংশ নেওয়ার ইচ্ছে নেই এই বিনিয়োগকারীর। তিনি জানান, রেকর্ড ডেটের আগে হাতে থাকা শেয়ার ছেড়ে দিতে চান তিনি।

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা ভিন্ন মন্তব্য করেন। তাদের অভিমত, দুর্বল কোম্পানি তার আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করে লভ্যাংশ প্রদান-সাপেক্ষে ক্যাটাগরি পরিবর্তন করতে পারে। এটা স্বাভাবিক নিয়ম। তবে কোনোভাবেই গুজবে কান দিয়ে বা কারও কথা শুনে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করা ঠিক নয়।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে গুজব ছড়ানোর লোকের অভাব নেই। তাই বিনিয়োগকারীদের সব সময় এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। তাদের উচিত, ভালো আর্থিক অবস্থাসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা। কারণ এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগে ঝুঁকি কম থাকে। অন্যদিকে দুর্বল কোম্পানিতে লাভের চেয়ে লোকসানের আশঙ্কা থাকে বেশি।’

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০