Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 1:29 am

পাঁচ কোটি টাকা ঘাটতি পূরণে সময় চায় মডার্ন সিকিউরিটিজ

আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে গত কয়েক বছরে কয়েকটি ব্রোকরেজ হাউস বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। এরপর ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) সব ব্রোকারেজ হাউস পরিদর্শন ও তদন্তের নির্দেশনা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধারবাহিকতায় ১০৮টি ব্রোকরেজ হাউসে ৫৮৫ কোটি টাকার বেশি সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে (সিসিএ অ্যাকাউন্ট) ঘাটতি পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মডার্ন সিকিউরিটিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক হিসাবে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি পাওয়া গেছে। ব্রোকারেজ হাউসটির ব্যাকঅফিস সফটওয়ারে ত্রুটি দেখা গেছে। এ অবস্থায় সমস্যা সমাধান ও ঘাটতি পূরণে তিন মাস সময় চেয়ে প্রতিষ্ঠানটি আবেদন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, তাদের ব্যাকঅফিস সফটওয়্যারটিতে কিছু ত্রুটি রয়েছে। এ কারণে ডিএসইর পরিদর্শন প্রতিনিধিদল প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক হিসাবে যে ঘাটতি পেয়েছে, তা বেশি দেখিয়েছে বলে দাবি করছে।
উল্লেখ্য, ডিএসইর পরিদর্শন প্রতিনিধিদল চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে এবং ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের গ্রাহক হিসাবে পাঁচ কোটি ২৭ লাখ ২৯ হাজার টাকার ঘাটতি পেয়েছে, যা সফটওয়্যার সমস্যার কারণে হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে। তাই কোম্পানি সমস্যাটি পরীক্ষা করে সমাধানের জন্য তিন মাস সময় চেয়ে গত ২৬ জুন আবেদন করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুর রহমান মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ব্যাকঅফিস সফটওয়্যার নিয়ে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তবে তাদের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি পাওয়া গেছে। এজন্য যেসব সুবিধা বন্ধ থাকার কথা বলা আছে, সেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত কয়েক বছরে তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ, বানকো সিকিউরিটিজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা সামনে এসেছে। এসব ঘটনার পর বিএসইসি দুই পুঁজিবাজারের সব ট্রেকহোল্ডার পরিদর্শন ও তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। এ তদন্তের ফলে পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ১০৮টি ট্রেকহোল্ডার বা ব্রোকারেজ হাউসের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে (সিসিএ অ্যাকাউন্ট) ৫৮৫ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১০৩টি কোম্পানি তাদের ঘাটতি সমন্বয় করলেও এখনও পাঁচটি কোম্পানি ঘাটতি সমন্বয় করেনি। এর মধ্যে সিনহা সিকিউরিটিজের ঘাটতি রয়েছে ৯ কোটি ৮২ লাখ ২৪ হাজার টাকা, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডের ঘাটতি রয়েছে এক কোটি ২৪ লাখ
১৮ হাজার টাকা, ৩৩ কোটি চার লাখ ৬৫ হাজার টাকা ঘাটতি রয়েছে পিএফআই সিকিউরিটিজের। এছাড়া এশিয়া সিকিউরিটিজের ৬২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা এবং মডার্ন সিকিউরিটিজের পাঁচ কোটি ২৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘাটতি রয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বিএসইসি গত বছরের ২২ মার্চ গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জকে লিমিটি সুবিধা স্থগিত করা, যোগ্য বিনিয়োগকারী হিসাবে আইপিও কোটা সুবিধা বাতিল করা, স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানার বিপরীতে পাওয়া লভ্যাংশ স্থগিত রাখা এবং ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারীর নিবন্ধন এবং নতুন শাখা ও বুথ খোলা বন্ধ রাখা।
তার আগে ২১ মার্চ বিনিয়োগকারীদের আমানত, অর্থাৎ শেয়ার ও অর্থ সরিয়ে নেয়া তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ, বানকো সিকিউরিটিজসহ ২৫টি ব্রোকারেজ হাউসের নিবন্ধন সনদ নবায়ন বন্ধসহ নানা সুযোগ-সুবিধা স্থগিত করা হয়।
এ বিষয়ে বিএসইসি থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এমন কিছু ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে গ্রাহকদের বিনিয়োগ করা অর্থ এবং সংশ্লিষ্ট ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী গ্রাহকদের সিকিউরিটিজের ঘাটতি উদ্ঘাটিত হয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থহানি এবং পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠান (ট্রেকহোল্ডার) বিনিয়োগকারীদের স্বার্থহানি করেছে, তাদের ‘ফ্রি লিমিট সুবিধা’ এবং প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন শেয়ারের ডিভিডেন্ড স্থগিত থাকবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ট্রেকহোল্ডার কোম্পানি ও ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারীর নিবন্ধন সনদ নবায়ন স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান নতুন করে কোনো শাখা বা বুথ খুলতে পারবে না।
সংশ্লিষ্ট ট্রেকহোল্ডার কোম্পানি কর্তৃক গ্রাহকদের বিনিয়োগ করা অর্থ ও সিকিউরিটিজের ঘাটতি সমন্বয় করার পর ন্যূনতম এক বছর ডিএসই ও সিএসইকে এসব প্রতিষ্ঠানে বিশেষ তদারকি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিমাসে দুবার সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে থাকা শেয়ার পরীক্ষা করার নির্দেশনাও দেয়া হয়।