সাইফুজ্জামান সুমন: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল সূচক ও লেনদেনের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। বাজারের এমন পরিস্থিতিকে বাজার স্থিতিশীলতার আভাস হিসেবে দেখছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমতে কমতে নেমে এসেছে তলানিতে। এতে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর এখন আর তেমনটা ঝুঁকিতে নেই। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সচেতন বিনিয়োগকারীরা এখন বাজারে বিনিয়োগ করছেন। কম দামে শেয়ারে বিনিয়োগ করে অল্প সময়ে মুনাফা করার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাচ্ছেন তারা। তাই বিনিয়োগকারীরা এখন আবার বাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি শুরু করেছেন। এতে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে শুরু করেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্রয় চাপের কারণে দীর্ঘদিন মন্দা থাকা বাজারে আবার সুদিন ফিরে আসতে শুরু করেছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, হঠাৎ বাজারে শেয়ারের ক্রেতা বেড়েছে, যার কারণে এখন বাজার ভালো হচ্ছে। বাজারে আবার একটা ডিমান্ড তৈরি হচ্ছে।
ডিএসইতে সব ধরনের সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি তালিকাভুক্ত ২০ খাতের মধ্যে পাঁচ খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি পেয়েছে। খাতগুলো হলোÑসেবা ও আবাসন, পেপার ও প্রিন্টিং, সিমেন্ট, ভ্রমণ ও অবকাশ এবং পাট খাত। সেবা ও আবাসন খাতে চারটি কোম্পানির মধ্যে সব কোম্পানির দর বৃদ্ধি পেয়েছে। খাতটিতে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পেয়েছে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের এক টাকা ৫০ পয়সা বা ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, সাইফ পাওয়ারটেকের ৫০ পয়সা বা শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ, শমরিতা হসপিটালের দুই টাকা ৫০ পয়সা বা ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। পেপার ও প্রিন্টিং খাতের ছয়টি কোম্পানির মধ্যে শতভাগ কোম্পানির দর বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পেয়েছে পেপার প্রসেসের ১৮ টাকা ৩০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, মনস্পুল পেপারের ১৬ বা ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ, হাক্কানি পাল্পের তিন টাকা ৭০ পয়সা বা ৭ দশমিক ০১ শতাংশ। সিমেন্ট খাতে সাতটি কোম্পানির মধ্যে সব কোম্পানির দরই বৃদ্ধি পেয়েছে। এ খাতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে আরামিট সিমেন্টের দুই টাকা ৬০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ, মেঘনা সিমেন্টের দুই টাকা ৫০ পয়সা বা ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে চারটি কোম্পনির মধ্যে সব কোম্পানির দর বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পেয়েছে ইউনিক হোটেলের দুই টাকা ৬০ পয়সা বা ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ, সী পার্ল হোটেলের ৯০ পয়সা বা শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ। পাট খাতে তিনটি কোম্পানির মধ্যে সব কোম্পানির দর বেড়েছে। দর বেশি বেড়েছে সোনালী আঁশের ৩৬ টাকা ৯০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ, জুট স্পিনার্সের ছয় টাকা ১০ পয়সা বা ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ, নর্দান জুটের আট টাকা বা ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪০ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৪৩৩ দশমিক ১৭ পয়েন্টে। ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ্ সূচক ৯ দশমিক ০৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫ দশমিক ৬১ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪১২ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩৫৫ দশমিক ৮৫ পয়েন্টে।
ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৪৩ কোটি ১২ লাখ টাকার, যা আগের কার্যদিবস থেকে ১০৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা বেশি। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৬৩৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকার। ৩৭৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৮১টির বা ৭৪ দশমিক ১৪ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ৫১টির বা ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশের এবং ৪৭টির বা ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৫৪ দশমিক ০৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৮২১ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে। সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৯০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ২০৯টির, কমেছে ৫৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির দর। ২২ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।