শেয়ার বিজ ডেস্ক: মুসলমানরা প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি ইরান, পারস্য, ইরাক, মিসর ইত্যাদি নগরে ইসলাম প্রচার করার জন্য প্রবেশ করেন এবং উন্নত সভ্যতার সঙ্গে পরিচিত হন। তার ঐতিহাসিক নমুনা বিভিন্ন দেশে ইসলামি স্থাপত্বের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। উমাইয়া শাসন আমলে দামেস্কে প্রথম নকশার আদলে দামেস্ক মসজিদ স্থাপন করা হয়। এটিকে অনুসরণ করে পরে সুন্দর সুন্দর অনেক মসজিদ নির্মিত হয়েছে। তখনকার মুসলিম স্থাপত্যে গম্বুজ, মিনার খিলান, বুরুজ মিহরাব, মোজাইক ও মার্বেল নকশার
ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
মুসলিম স্থাপত্যশৈলীতে এসব রীতি ধীরে ধীরে মুসলমানদের সক্রিয় রীতিতে দাঁড়িয়ে যায়। যা দেখে সহজেই চেনা যায় এটি মুসলিম স্থাপত্য। যা অন্যান্য ধর্মের স্থাপত্য থেকে আলাদা। এমন একটি ইসলামি স্থাপত্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন কুসুম্বা মসজিদ। পাঁচ টাকার নোটে এ মসজিদের ছবি রয়েছে বিধায় স্থানীয় লোকের কাছে এটি পাঁচ টাকার মসজিদ নামে পরিচিত। নওগাঁ জেলার অন্যতম গৌরব ঐতিহ্যবাহী কুসুম্বা মসজিদ। মান্দা উপজেলা সদর প্রসাদপুর বাজার থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের রাস্তার পাশে এর অবস্থান। প্রায় প্রতিদিনই পর্যটকরা আসেন মসজিদটি দেখতে। সুলতানি আমলের পরবর্তীকালের স্থাপনার এক দারুণ নিদর্শন এটি।
মুর্শিদাবাদ জেলার ডি এম শামসুর রহমানের লেখা ইতিহাস ‘মাহিনো’র মাধ্যমে জানা যায়, ৯০৭ (১৫০১ খ্রিষ্টাব্দ) হিজরিতে কুসুম্বা দীঘি খনন কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ৯০৯ হিজরিতে। এই দীঘির পশ্চিম পাড়ে ফেলা মাটির ওপর ৯১০ (১৫০৪ খ্রিষ্টাব্দ) হিজরিতে মসজিদ নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আলাউদ্দিন হোসেন শাহ। মসজিদের নির্মাণকাজ পরিপূর্ণভাবে শেষ হয় ৯৬৬ হিজরিতে। অর্ধবৃত্তাকার ছয় গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ৫০ ফুট লম্বা। পূর্ব-পশ্চিমে প্রস্থ ৪২ ফুট। পূর্বদিকে তিনটি প্রবেশদ্বার আছে। চার পাশে চারটি গম্বুজ রয়েছে। সৌন্দর্য পিপাসুদের মন কেড়ে নেয় আটকোনা গম্বুজগুলো।
দীঘির খনন ও মসজিদ নির্মাণের সময় মসজিদের চত্বরে বিশাল ফুল বাগান ছিল। সেই কুসুমবাগ থেকে কালক্রমে কুসুম্বা নাম রাখা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের পাঁচ টাকার নোটে ঐতিহাসিক এ মসজিদের ছবি রয়েছে।
মসজিদের গায়ে খুদাই করে বিভিন্ন লতা পাতার কারুকার্য এর সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করেছে। দেখে যেন মনে হয় শিল্পীর হাতে আঁকা ছবি। মিনারের এক পাশে একটি উঁচু আসন রয়েছে। ধারণা করা হয় তৎকালীন বিচারকরা এখানে বসে বিচার কাজ পরিচালনা করতেন। মসজিদের কার্নিশ বিভিন্ন কারুকার্যে সজ্জিত। মসিজদের সম্মুখ ভাগে প্রায় ৭৭ বিঘা জমির ওপর রয়েছে বিশাল জলাশয় এবং দৃষ্টিনন্দন ঘাট। যা দর্শানর্থীদের মুগ্ধ করে। দূরদূরান্ত থেকে অনেক পর্যটক এসে এখানে গোসল করেন।
মসজিদের এক পাশে রান্নার জন্য শেড তৈরি করে দেয়া হয়েছে। শেডের দুই সারিতে ৩০টি চুলা রয়েছে। অনেকেই মান্নত করে এখানে রান্নাবান্না করে লোকজনকে খাওয়ান। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে মসজিদটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ এটি সংস্কার করে।
প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী আসেন এ মসজিদের সৌন্দর্য দেখতে এবং তাদের এটি বিমোহিত করে থাকে। প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন এ মসজিদ মুসলমানদের ঐতিহ্য ধারণ করে আছে। এ মসজিদের অলংকরণ, মনোমুগ্ধ করা ডিজাইন মুসলমানদের উন্নত রুচিবোধের বহিঃপ্রকাশ।