সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: সম্প্রতি পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। এরপর থেকেই দেশের পাইকারি মোকামসহ খুচরা বাজারে অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ছে পেঁয়াজের। এরপরই বিকল্প দেশ থেকে শুরু হয়েছে পেঁয়াজ আমদানি। গত পাঁচ দিনে দেশের সাতটি বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে সাত হাজার ৩৬৩ টন। এর বেশিরভাগেরই আমদানি মূল্য ৪৩ টাকা করে।
এদিকে দেশেও পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে পেঁয়াজের। এরপরও বাজারে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে অসাধু আমদানিকারক ও আড়তদাররা। এতে পাইকারি বাজারে আড়তদাররা দ্বিগুণেরও বেশি মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, ১৬টি স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর দিয়ে দেশে পণ্য আমদানি-রফতানি হয়। এর মধ্যে সাতটি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বেশিরভাগ পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। তবে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণার পর থেকে এসব স্থলবন্দরে পেঁয়াজ আমদানি কমে গেছে। এর ফলে গত পাঁচ দিনে সোনামসজিদ, বেনাপোল, হিলি ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে মাত্র তিন হাজার টন।
এসব পেঁয়াজের আমদানি মূল্যও ছিল অন্য সময়ের তুলনায় বেশি। কিন্তু ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিকল্প দেশ হিসেবে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তার ধারাবাহিকতায় গত পাঁচ দিনে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে রেকর্ডসংখ্যক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যার পরিমাণ চার হাজার ২০৩ টন ৮৪১ কেজি। আর এসব পেঁয়াজের আমদানি মূল্য প্রায় ৪৩ টাকা করে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তুরস্ক ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন আমদানিকারকরা। গত পাঁচ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁয়াজ এসেছে ৩৬৪ টন অর্থাৎ ১৪ কনটেইনার। এর মধ্যে খালাস হয়েছে ২০২ টন। আর এসব পেঁয়াজের আমদানি মূল্য প্রতি কেজি ৩২ টাকা করে।
এনবিআর সূত্রে পাওয়া আমদানি তথ্য বিশ্লেষণে দেখে যায়, গত পাঁচ দিনে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে ৪৯ আমদানিকারক পেঁয়াজ আমদানি করেন। তাদের মধ্যে প্রায় সবাই কাছাকাছি পরিমাণের পেঁয়াজ আমদানি করেছেন। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৩৬৪ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছেন তিন আমদানিকারক। এর মধ্যে দুজন বন্দর থেকে পেঁয়াজ খালাস নিয়েছেন। এছাড়া সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ১৬ আমদানিকারক ৯১৭ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছেন। যদিও তাদের প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য পড়েছে ৭০ টাকা করে। একই সঙ্গে বেনাপোল দিয়ে তিন আমদানিকারক ২০৩ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছেন। তাদের প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ৭৩ টাকা করে। এছাড়া হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৯ আমদানিকারক গত পাঁচ দিনে পেঁয়াজ আমদানি করেছেন এক হাজার ১২৭ টন। এসব পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ৭৩ টাকা করে। একই সময় ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আট আমদানিকারক ৬৮৩ টন পেঁয়াজ আমদানি করেন, যার প্রতি কেজির মূল্য ৭৫ টাকা করে। তাছাড়া ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে সামান্য যেসব পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, সেগুলোর মূল্য প্রতি কেজি ১০০ টাকার বেশি পড়েছে।
এদিকে গত দুদিন দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে সরেজমিনে দেখা যায়, আমদানি মূল্যে দ্বিগুণের বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন আড়তদাররা। তারা বলছেন, ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ায় আমদানিকারকরা তাদের কম মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দিচ্ছে না। একই সঙ্গে তাদের দেওয়া নির্ধারিত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি না করলে পরবর্তী চালান দেবে না বলে হুমকিও দিয়েছে।
তারা আরও জানান, চট্টগ্রামে পেঁয়াজ আমদানিকারক নেই। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন আমদানিকারকের কমিশন এজেন্ট হিসেবে তারা ব্যবসা করছেন। ফলে মূল্য বৃদ্ধির পেছনে আমদানিকারকরা এককভাবে দায়ী। অপরদিকে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৪২-৪৩ টাকায় কেনা পেঁয়াজ ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রির প্রমাণ পেয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম।
এজন্য এক ব্যবসায়ীকে জরিমানা ও সতর্ক করেন তৌহিদুল ইসলাম। তারপর একই দিন সন্ধ্যায় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরিজী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক জরুরি সভা ডেকে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সতর্ক করেন।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরিজী বলেন, ‘জেলা প্রশাসক বিক্রিমূল্য নির্ধারণ করে দিচ্ছেন না; তবে আমদানি মূল্যের দ্বিগুণ দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা যাবে না। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে এবং আমদানি মূল্যও আমাদের জানা আছে। ফলে কেউ যদি অতিরিক্ত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করে, তাদের আড়ত সিলগালা করে দেওয়া হবে।’
পাঁচ দিনে পেঁয়াজ আমদানি ৭৩৬৩ টন
