শেয়ার বিজ ডেস্ক: পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যবিবাদ জোরালো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিকল্প চিন্তা করছে চীন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ এশিয়ার পাঁচ দেশ থেকে সয়াবিনসহ পশুখাদ্যের উপাদান আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করছে দেশটি। গতকাল মঙ্গলবার চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত, লাওস, দক্ষিণ কোরিয়া ও শ্রীলঙ্কা থেকে সয়াবিন, সয়াবিন কেক ও মাছের খাদ্য আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে। আগামী ১ জুলাই থেকে এ শুল্কাছাড় কার্যকর হবে। বর্তমানে এসব দেশের সয়াবিন আমদানিতে তিন শতাংশ, সয়াবিন কেক আমদানিতে পাঁচ শতাংশ ও মাছের খাদ্যে দুই শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে। এ শুল্ক ছাড় দেবে দেশটি।
তবে ভারত ছাড়া অন্য দেশগুলোতে খুব কমই সয়াবিন উৎপাদিত হয়। ওই দেশগুলো থেকে ২০১৭ সালে এসব পণ্য আমদানি করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ভারতে ২০১৬-১৭ বিপণন বর্ষে ১১ মিলিয়ন টন মটরশুঁটি উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে রফতানি করা হরেছে মাত্র দুই লাখ ৬৯ হাজার টন।
বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যবিবাদ দীর্ঘদিনের। সর্বশেষ চীন পাল্টা হিসেবে সয়াবিনসহ পাঁচ হাজার কোটি ডলারের ৬৫৯টি মার্কিন পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দেয়। বেইজিংয়ের এমন সিদ্ধান্তে দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যেই এশিয়ার দেশগুলোর ওপর শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা এলো। মূল্যের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্যের মধ্যে চীন সবচেয়ে বেশি আমদানি করে সয়াবিন।
মার্কিন পণ্যে শুল্কারোপের প্রতিশোধ হিসেবে চীনা পণ্য আমদানিতে নতুন করে আরও ২০ হাজার কোটি ডলারের শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীন নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন না করলে ১০ শতাংশ এই শুল্ক বসানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি, যা আগামী জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে। ট্রাম্পের এই বক্তব্যের ফলে দেশ দুটির মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা আরও বেড়ে গেল। বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের পরিণতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশ্ব পুঁজিবাজারে ধস নেমেছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পাঁচ হাজার কোটি ডলারের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে আমদানি শুল্কারোপ করা হবে, যা আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হবে। তার ওই ঘোষণার জবাবে চীন জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা সমপরিমাণ পণ্যের ওপর তারাও শুল্কারোপ করবে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে কৃষিপণ্য, গাড়ি ও সামুদ্রিক পণ্য।
চীনের পাল্টা হুমকির জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, চীন মার্কিন কোম্পানি, শ্রমিক ও কৃষকদের ওপর বদলা নিতে চাইছে, যারা কোনো দোষ করেনি। সর্বশেষ হুমকিতে ট্রাম্প বলেছেন, বেইজিং যদি মার্কিন পণ্যে শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আরও ২০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যে শুল্ক বসাবে। তিনি তার বাণিজ্য উপদেষ্টাকে সেসব চীনা পণ্য চিহ্নিত করতে বলেছেন, যেগুলোর ওপর নতুন শুল্কারোপ করা হবে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৮০০ ধরনের চীনা পণ্যে বছরে ৩৪ বিলিয়ন ডলার শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে এয়ারক্রাফটের টায়ার ও টার্বাইন থেকে শুরু করে ডিশওয়াশার পর্যন্ত রয়েছে। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আরও ১৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের পণ্যের ওপর শুল্কারোপের চিন্তা করা হচ্ছে এবং এগুলো পরে কার্যকর করা হবে।