Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:28 am

পাঁচ ‘বঙ্গবন্ধু টানেলের’ ব্যয়ের সমান রাজস্ব আদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর ২০২১-২২ অর্থবছর পাঁচটি বঙ্গবন্ধু টানেলের ব্যয়ের সমান রাজস্ব আদায় করেছে। বিদায়ী অর্থবছর প্রায় সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় তিন হাজার ২১০ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। শুধু জুন মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় চার হাজার ১২৩ কোটি টাকা। জুন মাসে আদায় প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ১৫ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছর এলটিইউ রাজস্ব আদায়ে দুটি রেকর্ড করেছে। প্রথমটি হলো এলটিইউ’র ইতিহাসে প্রথমবার ৫০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড। দ্বিতীয়টি হলো, জুনে চার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়।

এলটিইউ’র কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল। এই টানেলের নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী এলটিইউ বিদায়ী অর্থবছর পাঁচটি বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণব্যয়ের সমান রাজস্ব আদায় করেছে। তবে পর্যাপ্ত জনবল ও প্রযুক্তি সহায়তা পেলে রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। ৫০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের মাইলফলক অর্জনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছর এলটিইউ’র লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ হাজার ৩৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫২ হাজার ৪৬২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছর এলটিইউ আদায় করেছিল ৪৯ হাজার ২৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ফলে বিদায়ী অর্থবছর বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে তিন হাজার ২১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আবার জুন মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো সাত হাজার ৪৪ কোটি ২২ লাখ টাকা, যার বিপরীতে আদায় হয়েছে চার হাজার ১২৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৭৭৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। জুন মাসে আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ শতাংশের বেশি।

অপরদিকে বিদায়ী অর্থবছরের শুধু জুন মাসে চার হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড করেছে। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছর জুন মাসে আদায় হয়েছে তিন হাজার ৩৪৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছর তিন হাজার ৪০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছর তিন হাজার ৫৬০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

জুন ছাড়াও বিদায়ী অর্থবছর মে মাসে চার হাজার ৮৮০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, এপ্রিল মাসে পাঁচ হাজার ৩৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা, মার্চ মাসে চার হাজার ৬১০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে চার হাজার ৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, জানুয়ারি মাসে চার হাজার ৮৯০ কোটি ৮১ লাখ টাকা, ডিসেম্বরে পাঁচ হাজার ৩৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, নভেম্বরে চার হাজার ২১৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, অক্টোবরে চার হাজার ৪৪১ কোটি ১২ লাখ টাকা, সেপ্টেম্বরে চার হাজার ৩৬১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, আগস্টে তিন হাজার ৮৯৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ও জুলাই মাসে দুই হাজার ৫৯০ কোটি ৯৭ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে।

এলটিইউ’র সূত্রমতে, ভ্যাট আদায়ে এনবিআরের আওতাধীন বিশেষায়িত শাখা এলটিইউ ভ্যাট। দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্নত সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে ২০০৩ সালে এলটিইউ গঠন করা হয়। বর্তমানে এলটিইউতে ১১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এনবিআরের মোট ভ্যাট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫৬ শতাংশ আদায় করে এলটিইউ। গত ১০ বছরে এলটিইউর লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে প্রায় ২৪০ দশমিক ৮০ শতাংশ, আর আদায় বেড়েছে প্রায় ১৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবছর লক্ষ্যমাত্রা ও আদায়ের পরিমাণ বাড়ছে। দক্ষ জনবল আর প্রযুক্তি সক্ষম করা হলে দেশি-বিদেশি বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও বেশি ফাঁকি উদ্ঘাটন এবং রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন এনবিআর সংশ্লিষ্টরা।