সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামভিত্তিক দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গ্রুপ আবুল খায়ের। এ গ্রুপের বহুমাত্রিক ব্যবসার মধ্যে ইস্পাত, সিমেন্ট, সিরামিক, মিল্কক্রিম পাউডারসহ বিভিন্ন প্রকার ভোগ্যপণ্য রয়েছে। এর মধ্যে সিমেন্ট, ইস্পাত ও গুঁড়ো দুধের ব্যবসায় দেশের শীর্ষ ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে গ্রুপটি। এসব খাতে বাজারে অবস্থানও পোক্ত আবুল খায়ের গ্রুপের। যদিও গ্রুপটি ২০১৫ সালের পর নতুন কোনো খাতে বিনিয়োগ করেনি। সর্বশেষ ইস্পাত খাতের সহায়ক হিসেবে মেল্টিং কারখানা স্থাপন করেছিল।
আবুল খায়ের গ্রুপের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৩ সালে বিড়ি ব্যবসায়ী আবুল খায়েরের হাত ধরে আবুল খায়ের গ্রুপের যাত্রা। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় আবুল বিড়ি কোম্পানি থেকেই এ গ্রুপের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু। ১৯৭৮ সালে এর প্রতিষ্ঠাতা আবুল খায়ের মারা যান। এরপর একে একে গ্রুপে যোগ হয়েছে একডজনেরও বেশি মাঝারি ও ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আবুল খায়েরের উত্তরসূরিরা আবুল কালাম, আবুল হাশেম, আবু সায়েদ চৌধুরী ও শাহ শফিকুল ইসলাম গড়ে তুলেছেন স্টিল মিল, সিমেন্ট কারখানা, চা বাগান, ডেইরি প্রডাক্টসহ অনেক প্রতিষ্ঠান।
এর মধ্যে ১৯৯৩ সালে আবুল খায়ের গরু মার্কা ঢেউটিন দিয়ে ইস্পাত শিল্পে নাম লেখায়। এরপর ১৯৯৪ সালে আবুল খায়ের গ্রুপ স্টারশিপ কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে দুগ্ধ খাতে নাম লেখায়। পরে ১৯৯৫ সালে যোগ হয় বেবি ফুডস। ১৯৯৭ সালে গ্রুপটি আসে সিগারেট ব্যবসায়। আর ২০০২ সালে সিমেন্ট ব্যবসায় যুক্ত হয়। ২০০৪ সালে সিলন চা নিয়ে বাজারে আসে আবুল খায়ের। নিজেদের আমদানিকৃত পণ্য পরিবহনে ২০০৫ সালে যুক্ত হয় শিপিং ব্যবসায়। ২০১০ সালে লং স্টিলে উৎপাদনে আসে আবুল খায়ের স্টিল। ২০১৪ সালে সিরামিক এবং ২০১৫ সালে মেল্টিং কারখানায় যুক্ত হয়। এরপর আর কোনো খাতে বিনিয়োগ করেনি আবুল খায়ের গ্রুপ। অথচ এরপর চট্টগ্রামের অনেক গ্রুপ এলপিজি, রিফাইনারি, সমুদ্রগামী জাহাজ, কেমিক্যালসহ অর্থনৈতিক অঞ্চলে নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এছাড়া এতসব ভালো কোম্পানি থাকার পর দেশের পুঁজিবাজারে একটি কোম্পানিও নিবন্ধন করাননি গ্রুপের কর্ণধাররা।
বিনিয়োগ বিশ্লেষকরা বলেন, আবুল খায়ের দেশের অন্যতম বড় শিল্পগ্রুপ। এ গ্রুপটির আরও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। তারা যা বাজারে আনে তা-ই তো মার্কেট লিডার হয়। তবে এটা ঠিক যে, কমন কিছু খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ হয়েছে। তারা এলপিজি, রিফাইনারি, পাওয়ার সেক্টরের বিনিয়োগ বাড়াতে পারত।
এ গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ আছেÑএমন একাধিক ব্যক্তি বলেন, আবুল খায়ের গ্রুপের উদ্যোক্তাদের তৃতীয় প্রজšে§র মধ্যে একটা গ্যাপ আছে। তাই হয়তো নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না। এটাও শুনেছি, কেউ কেউ আলাদা আলাদা ব্যবসা করার জন্য চেষ্টা করছেন। এসব নিয়ে চট্টগ্রামের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তারা আলাপ-আলোচনাও করেছেন। বাকিটা তারা ভালো বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে গত মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টায় আবুল খায়ের গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েদ চৌধুরীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার ব্যক্তিগত সহকারী জানান, তিনি এখন মিটিংয়ে আছেন। ফলে মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে গ্রুপটির ব্র্যান্ড বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, নতুন করে কোনো খাতে বিনিয়োগ করা হয়নি। আগের গুলো আছে। আর আমাদের মালিক পক্ষ বিজনেস, পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ নিয়ে সরাসরি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন না।