Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 12:24 pm

পাঁচ বছরে পলিসি বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে

পলাশ শরিফ: আইন ও প্রযুক্তিগত দুর্বলতা, গ্রাহক ভোগান্তি ও জনমনে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে ‘সাশ্রয়ী ও ঝুঁকিমুক্ত’ ডাক জীবন বিমা। ১৮৮৪ সালে ডাক বা চিঠিপত্র বহনকারী রানারদের জন্য এ বিমা চালু করা হয়। তবে সাত দশক পরও এ বিমা ব্যবস্থা জনপ্রিয়তা পায়নি। সময়ের ব্যবধানে ওই বিমার প্রতি মানুষের আগ্রহ এখন তলানিতে। বিগত পাঁচ বছরে ডাক জীবন বিমার পলিসি বিক্রি অর্ধেকেরও বেশি কমেছে।

* প্রিমিয়াম আয় কমেছে ৭৮ কোটি টাকা
* টিকে থাকতে সংস্কারের উদ্যোগ

ডাক বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ডাক জীবন বিমার প্রিমিয়াম হার বেসরকারি বিমা কোম্পানির একই ধরনের বিমার তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কম। প্রতি এক হাজার টাকা পলিসির বিপরীতে এক বছরের জন্য সর্বনি¤œ এক টাকা ১৫ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা ১৫ পয়সা প্রিমিয়াম নেওয়া হয়। নামমাত্র প্রিমিয়ামের পাশাপাশি গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে আয়কর রিবেট ও উল্লেখযোগ্য হারে বোনাসের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আর দুই বছর মেয়াদ শেষে গ্রাহকরা জমাকৃত অর্থের ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ সুবিধাও নিতে পারেন। কিন্তু তারপরও এ বিমার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ছে না।
অনুসন্ধানে মিলেছে, ডাক-বিভাগে এখনও প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগেনি। তাই বিমা প্রিমিয়াম আদায়-জমা ও দাবি পরিশোধে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে। ডাক বিভাগের সেবার মান নিয়ে অসন্তোষ-ভোগান্তি, বিমা সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতি, অপ্রতুল সেবা, এ জীবন বিমা বিষয়ে সাধারণ মানুষের ন্যূনতম ধারণা না থাকা, ডাক বিভাগে দক্ষ জনবল ঘাটতি ও দেশের বিমা খাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণেই সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না ডাক বিভাগ। এ বিমা ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করে তোলার জন্য সঞ্চয় পরিদফতরের পক্ষ থেকে বেশকিছু উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে। তবে সেসব উদ্যোগের অধিকাংশই এখনও আঁতুড়ঘরে। এসব কারণেই সুযোগ থাকলেও ডাক জীবন বিমাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না।
ডাক বিভাগের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৭৫টি বিমা পলিসি ইস্যু করা হয়েছিলো। এর বিপরীতে প্রায় ৩৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয় হয়েছিলো। এর বিপরীতে সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ওই বিমা পলিসি কমে ছয় হাজার একটিতে নেমেছে। এর জের ধরে মোট বিমা প্রিমিয়াম আয় প্রায় ৮২ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় নেমেছে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ডাক জীবন বিমার পলিসি বিক্রি প্রায় অর্ধেক কমেছে। আর প্রিমিয়াম আয় কমেছে ৭৮ কোটি ৩৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা। তবে এর আগের অর্থবছরের (২০১৪-১৫) তুলনায় ৯৩০টি পলিসি ও প্রিমিয়াম আয় ২১ কোটি ৫৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা বেড়েছে।
তবে সংকট উত্তরণে ডাক জীবন বিমা ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করে তুলতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে ওই সেবা বাস্তবায়নকারী সংস্থা সঞ্চয় পরিদফতর। পিছিয়ে পড়ার কারণ ও সংস্কার প্রস্তাব চেয়ে ওই পরিদফতরের পক্ষ থেকে ডাক অধিদফতরে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলে এ সেবার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা।
এ বিষয়ে আলাপকালে ডাক জীবন বিমার কার্যক্রমের রিজিওনাল ম্যানেজার রাশিদুল হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘জনবল, আইন-নীতিমালা ও তথ্য-প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে ডাক জীবন বিমাকে জনপ্রিয় করে তোলা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে এ বিমাকে জনপ্রিয় করতে কাজ করে যাচ্ছি। বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার’-এর উদ্যোগ নিয়েছে সঞ্চয় পরিদফতর। এজন্য সুপারিশমালা তৈরি করা হচ্ছে। আইনগত সংস্কারসহ দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে এ বিমাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। অন্যদিকে তথ্য-প্রযুক্তিগত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় ডাক জীবন বিমা কার্যক্রম অটোমেশনের প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ্য, ডাক জীবন বিমা ব্যবস্থা ১৯৪৭ সালে সাধারণ জনগণের জন্য উš§ুক্ত করা হয়। এর আগে এটি কেবল ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ‘লাভও নয়, ক্ষতিও নয়’ এমন নীতিতে জীবন বিমা সেবা দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ডাক বিভাগ। জীবন চুক্তি বীমা, মেয়াদি বিমা, শিক্ষা মেয়াদি বিমা ও বিবাহ বিমাসহ বর্তমানে ডাক বিভাগের মাধ্যমে পাঁচ ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তবে ওই পাঁচ ধরনের বিমা মধ্যে জীবন চুক্তি বিমা-ই টিকে আছে। বাকিগুলোতে সাড়া মিলছে না। ১৯ থেকে ৫৫ বছর বয়সী সব শ্রেণি-পেশার বাংলাদেশি নাগরিক ওই বিমা সুবিধা নিতে পারেন। বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে বর্তমানে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অংকের বিমা করানো হচ্ছে।