নাজমুল হুসাইন: গোড়ার দিকে তেমন ব্যবসা করতে না পারলেও গত পাঁচ বছরে সুপারশপ ‘স্বপ্ন’-এর টার্নওভার (বিক্রি) বেড়েছে প্রায় চারগুণ। বর্তমানে দেশের প্রায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে এ সুপারশপটি।
জানা যায়, ২০০৮ সালে যাত্রা করে এসিআই লজিস্টিক লিমিটেডের সুপারশপ ‘স্বপ্ন’। শুরুর দিকে কয়েক বছর বিক্রি মন্থর থাকলেও ২০১২ সালের পর থেকে বিক্রি বেড়েছে দ্রুতগতিতে।
স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ জানায়, শুরুর দিকে স্বপ্নের টার্নওভার ছিল পাঁচ কোটি টাকা। প্রতিবছর একটু একটু করে বেড়ে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে এটা ১৭ কোটি টাকায় পৌঁছায়। তবে ২০১২ সাল থেকে ব্যাপক প্রচারণার কারণে দ্রুতগতিতে বেড়ে যায় স্বপ্নের বিক্রি। এর ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে স্বপ্নের টার্নওভার দাঁড়িয়েছে ৬৮ কোটি টাকা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুধু বিক্রি নয়, উন্নতি হয়েছে ক্রেতা সমাগমসহ কয়েকটি সূচক। স্বপ্নে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজার ক্রেতা আসছে। শুক্রবারসহ অন্যান্য ছুটির দিনে এ সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তবে এ সংখ্যা শুরুর দিকে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ছিল। এতে এখন স্বপ্নের প্রতিটি স্টোরভিত্তিক গড় বিক্রি আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। শেষ বছরে প্রতিটি স্টোরের প্রবৃদ্ধি কমপক্ষে ২০ শতাংশ হারে বেড়েছে।
এসব বিষয়ে এসিআই লজিস্টিকের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সাব্বির হাসান নাসির শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এমনটা চলতে থাকলে স্বপ্ন আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। প্রতিবছর আমাদের ক্রেতা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। দেশের পাঁচ লাখ পরিবার এখন স্বপ্নে বাজার করে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের পর থেকেই স্বপ্ন দেশের মার্কেট লিডার। গত বছর আমরা দেশের বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছি। ক্রেতা বাড়াতে স্বপ্ন কয়েক বছরে সফল কতগুলো কার্যক্রম চালিয়েছে। এখন স্বপ্নের আইলেটও দেশের সর্বোচ্চ ও সেরা মানের। স্বপ্ন সবার পাশের সর্বোচ্চ পণ্য সমাহার নিয়ে বাজার খুলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুরুর দিকে স্বপ্নের প্রতিটি আউটলেটে সাত থেকে আট হাজার পণ্যের সমাহার থাকতো। বর্তমানে এখন স্বপ্নের প্রায় ৪১ হাজার পণ্য পাওয়া যায়। মধ্যবিত্তসহ সব শ্রেণির ক্রেতাকে সুপারশপে আনার চেষ্টা করছে স্বপ্ন। এছাড়া স্বপ্ন লাইফ-এ লাইফস্টাইল পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, যা ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে। সেখানে প্রায় সাড়ে ৪০০ ভেন্ডারের পণ্য বিক্রি হচ্ছে।’
ঢাকায় যেসব এলাকায় সুপারশপের আউটলেট রয়েছে সেখানকার প্রায় ২৫ শতাংশ উচ্চবিত্ত ও ১৫ শতাংশ মধ্যবিত্ত সুপারশপে যান। এমনকি কাঁচাবাজারের বিকল্প হিসেবেও অনেকে এসব সুপারশপে কেনাকাটা করেন। তবে এখনও ঢাকাই সুপারশপগুলোর মূলবাজার। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে বেশি পরিমাণে সুপারশপ রয়েছে এবং সেগুলোতে ক্রেতা সমাগমের হার তুলানামূলকভাবে অনেক বেশি।
শুরুর দিকে সারা দেশে ৭৩টি আউটলেট নিয়ে বাজারে আসে এসিআই লজিস্টিক। তবে ব্যবসায়িক মন্দার কারণে ২০১২ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা কমিয়ে ৩৭টি করা হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপে মন্দা কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি প্রচার ও ক্রেতার আস্থা অর্জনে সার্থক হয় স্বপ্ন। সে সময়ের পর বিক্রি বাড়ায় আবারও ক্রমাগত বাড়ানো হয় আইটলেটের সংখ্যা। বর্তমানে স্বপ্নর ৫৮টি আউটলেট রয়েছে। যার মধ্যে ৫০টি ঢাকায়। এছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট কুমিল্লাসহ কয়েকটি স্থানে বাকি আউটলেটগুলো রয়েছে।
স্বপ্ন জানায়, পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে আউটলেট সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে এসিআই লজিস্টিকস। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে খুচরা বিক্রির অন্তত চার থেকে পাঁচ শতাংশ অর্গানাইজড রিটেইলের আওতায় আনা হবে। বর্তমানে দেশের সব সুপারশপের বিক্রির পরিমাণের এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে স্বপ্নে। নিকটবর্তী ২৫ শতাংশ শেয়ার নিয়ে রয়েছে আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী। যদিও কয়েক বছর আগেও স্বপ্ন দেশের তৃতীয় অবস্থানের সুপারশপ ছিল।
বর্তমানে দেশজুড়ে স্বপ্নের ডিলার স্টোরের সংখ্যা আরও ১০টি। প্রতিদিন বিক্রীত পণ্যের মধ্যে সরাসরি উৎপাদকের কাছে সংগ্রহীত অর্ধেকের বেশি। বিক্রীত ৬৫ শতাংশ সবজি ও ৫০ মাছ উৎপাদকের থেকে সংগ্রহ করা। এছাড়া স্বপ্ন লাইফের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৪০০ ছোট উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য বিক্রি করছে। একইসঙ্গে শেয়ারিং ব্যবসায় রয়েছে প্রচুর উদ্যোক্তা।