Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 12:43 pm

পাঁচ বছর পর সোনামসজিদ পর্যটন মোটেল সংস্কারের উদ্যোগ

শেয়ার বিজ প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদে নির্মিত অত্যাধুনিক পর্যটন মোটেলটি ক্ষতিগ্রস্তের দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সীমান্তবর্তী এলাকা ও স্থলবন্দর থাকায় এখানে অনেক পর্যটক আসেন। পর্যটকদের অত্যাধুনিক সুবিধা দিতে সরকার এখানে পর্যটন মোটেলে নির্মাণ করে। কিন্তু এ মোটেলটি উদ্বোধনের আগেই ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর স্থানীয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এরপর দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত পড়ে থাকে এটি। সম্প্রতি এটি সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে বেসামরিক ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দর এলাকায় প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক একটি পর্যটন মোটেল নির্মাণ করা হয়। সে সময় একজন প্রকৌশলীকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। এরপর স্থানীয়রা মোটেলটি সংস্কারের জন্য বারবার কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘোরেন।

২০১৫ সালে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন মোটেলটি সংস্কার করে চালু করার লক্ষ্যে পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম। এর পরেও পর্যটন মোটেলটি চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি বেসামরিক ও পর্যটন মন্ত্রণালয় মোটেলটি সংস্কারের জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. গোলাম রাব্বানী। শিগগিরই সংস্কার কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

জানা যায়, মুসলিম স্থাপত্য শিল্পে সমৃদ্ধ বাংলার পুরাতন রাজধানী গৌড়ে বিপুল সম্ভবনা থাকা সত্ত্বেও সোনামসজিদে পর্যটনের ব্যবস্থা ছিল না। বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর শিবগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুর মৌজায় পর্যটন মোটেল নির্মাণের জন্য পর্যটন করপোরেশনের নামে এক একর জমি অধিগ্রহণ করে। ২০১০-১১ অর্থবছরে সোনামসজিদে পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন।

এ গৌড়ে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ও মেজর নাজমুল হকের সমাধি, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গণকবর, ঐতিহাসিক তহখানা, কামেল পীর হজরত শাহ নেয়ামতুল্লাহ (র.)-এর মাজার, ছোট সোনামসজিদ, শাহ সুজার প্রাসাদ, দারুসবাড়ির মসজিদ, মাদরাসা, কোতোয়াল দীঘি, টাকশাল দীঘি, দখলদরজা, চামাকাঠি মসজিদ, ধনাইচক মসজিদ, খঞ্জনদীঘির মসজিদসহ অসংখ্য পীর আউলিয়াদের মাজার।

এছাড়া রয়েছে বিশাল এক দীঘি যার নাম বালিয়াদীঘি। এছাড়া এ সুপ্রাচীন স্থাপত্য দেখার জন্য দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আসেন।

প্রতিদিন এ এলাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখার জন্য দেশি-বিদেশি বহু পর্যটক এখানে আসেন। সোনামসজিদে রয়েছে দেশের অন্যতম দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর, কাস্টমস ইমিগ্রেশন অফিস। এখান দিয়ে প্রতিদিন পাসপোর্টের মাধ্যমে শতাধিক যাত্রী ভারত যাতায়াত করে থাকেন। পর্যটন মোটেলটি চালু করা হলে এ এলাকায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে এবং প্রচুর রাজস্ব পাবে সরকার।

তিন তলাবিশিষ্ট পর্যটন মোটেলটিতে রয়েছে ১৮টি ভিআইপি কক্ষ, সাধারণ কক্ষ ১২টি, ইকোনমি কক্ষ ও সাধারণের জন্য ডরমিটরি কক্ষ ১২টি, অভ্যর্থনা কক্ষ একটি, ক্যান্টিন একটি, রান্নাঘর একটি, একটি বৈদুতিক সাবস্টেশন।

এছাড়াও রয়েছে অফিস ও গাড়ি পার্কিং করার জন্য এরিয়া। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মো. গোলাম রাব্বানী জানান, বেসামরিক ও পর্যটন মন্ত্রণালয় মোটেলটি সংস্কারের জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দ্রুত শুরু হবে সংস্কার কাজ।