Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 10:19 pm

পাঁচ ব্যাংককে গ্যারান্টি দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুক্তি

রোহান রাজিব: সংকটে থাকা সাতটি ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি তারল্য সহায়তা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি চেয়ে আবেদন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ব্যাংককে গ্যারান্টি দিতে চুক্তি সই করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ব্যাংকগুলো কী পরিমাণ তারল্য সহায়তা নিতে পারবে, তাও ঠিক করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নগদ টাকার সংকট মেটাতে বিশেষ ধার চেয়ে আবেদন করেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি সবচেয়ে বেশি সাত হাজার ৯০০ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা চেয়ে আবেদন করে। এরপর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পাঁচ হাজার কোটি, ন্যাশনাল পাঁচ হাজার কোটি, এক্সিম চার হাজার কোটি, গ্লোবাল ইসলামী তিন হাজার ৫০০ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী দুই হাজার কোটি এবং ইউনিয়ন ব্যাংক দেড় হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তার গ্যারান্টি চেয়েছে।

জানা যায়, প্রাথমিকভাবে পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিপত্রে সই করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিপত্র সইয়ের পর গতকাল সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, যেসব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, তারা এখন আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করে বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্যারান্টির জন্য পাঠাবে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যারান্টির আওতায় কোন ব্যাংক কত টাকা নিতে পারবে, তা বিবেচনা করে অনুমতি দেবে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়। এগুলোসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা। নামে-বেনামে টাকা বের করে নেয়ায় তীব্র তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে ব্যাংকগুলোয়। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআরআর ও এসএলআর রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাবেও ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। ঋণাত্মক হলেও লেনদেন অব্যাহত রাখার সুযোগ দিয়েছিলেন সাবেক পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। টাকা ছাপিয়ে দেয়া সেই বিশেষ সুবিধা এখন বন্ধ করে দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
এ অবস্থায় সাময়িক সংকট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে ধারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর দুর্বল ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোট নিয়ে রাখবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোনো ব্যাংক সংকটে পড়লে সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ধার দেয়া হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ধার দেয়া মানে সরাসরি টাকা ছাপানোর মতো। এতে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়ে। এমনিতেই এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি, যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি টাকা না দিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে ধারের ব্যবস্থা করছে। এর মানে বাজারের টাকা এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে যাবে। ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি প্রভাব পড়বে না। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির মানে হলো, কোনো কারণে এসব ব্যাংক ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই টাকা দেবে।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের মাধ্যমে রুগ্ণ ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনা করবে বলে ইঙ্গিত দিলে পুনর্গঠিত এসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির জন্য আবেদন করে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের মতো টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেবে না। তবে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক মুদ্রা সরবরাহের মাধ্যমে এ সহায়তা নিতে পারে।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে ৫ আগস্ট পতনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার অনেক দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। এ কারণে ব্যাংক বন্ধ ছিল। আবার অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে নানামুখী গুজবের কারণে মানুষের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়েছিল। তবে এখন আবার ব্যাংকে টাকা জমার পরিমাণ বাড়ছে।

প্রচলনে থাকা টাকা তথা ‘নোটস ইন সার্কুলেশন’ কমে তিন লাখ ১৪ হাজার ৫৮৩ কোটিতে নেমেছে। সরকার পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে গত ১৮ আগস্ট তিন লাখ ২২ হাজার ২৭১ কোটিতে উঠেছিল। এর মানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফিরেছে নিট সাত হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।