নিজস্ব প্রতিবেদক: নানা শর্তে কমছে সঞ্চয়পত্রের বিক্রির পরিমাণ। চলতি (২০১৯-২০২০) অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে সঞ্চয়পত্র নিট ৩২০ কোটি ৬২ লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে। আগের বছর একই মাসে বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসে পাঁচ হাজার ৮৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে ২১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। এ হিসাবে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি আগের বছরের চেয়ে ৭৩ শতাংশ কমেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার না কমিয়ে এ খাতে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর পাঁচ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সঞ্চয়পত্রের সব লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করতে হচ্ছে ক্রেতাদের, দুর্নীতি কিংবা অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করতে ক্রেতার তথ্যের একটি ডেটাবেজে সংরক্ষণের লক্ষ্যে অভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। এগুলোর মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কঠোর হয়েছে সরকার। চাইলেই ভবিষ্যৎ তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই। এখন প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কর কমিশনারের প্রত্যয়ন লাগে। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ফার্মের নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগছে উপকর কমিশনারের প্রত্যয়ন। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে মোট পাঁচ হাজার ১৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে চার হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় দুই হাজার ৩৭৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩২০ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার ৮৬২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় ১২ হাজার ৮০৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
যদিও বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ঋণ নেয়। গত অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্য ছিল সরকারের। বিক্রি বাড়তে থাকায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঠিক করা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। আর সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় দুই লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা।
এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৪ হাজার কোটি টাকা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিক্রি হয় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার পেয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। এর আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে দুই শতাংশ করে কমানো হয়েছিল।
