পাঁচ শিল্পকারখানা ফেরত চায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়

সোহেল রহমান: সরকারের ব্যয় কমিয়ে আনতে নব্বই দশকের গোড়ার দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানি বা বন্ধ শিল্প, কল-কারখানাগুলো বেসরকারীকরণ তথা বিক্রির নীতি অনুসরণ করেছিল তৎকালীন সরকার। পরবর্তী সরকারগুলোও এ নীতি অব্যাহত রাখে। তবে এক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর অসহযোগিতার কারণে সরকারের এ নীতি আশানুরূপ সফল হয়নি। এদিকে বর্তমানে বেসরকারীকরণের আগের নীতির কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে সরকার। যে কারণে বেসরকারীকরণের উদ্দেশ্যে গঠিত ‘বেসরকারীকরণ কমিশন’ বিলুপ্ত করে এবং ‘বিনিয়োগ বোর্ড’-এর সঙ্গে একীভূত করে গঠন করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’। এ পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারীকরণের জন্য এর আগে কমিশনে ন্যস্ত পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানি বা বন্ধ শিল্পপ্রতিষ্ঠান আবার নিজেদের অধীনে নিতে চায় ‘বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়’।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চিহ্নিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ফেরত পেতে ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠেয় কমিটির বৈঠকে অনুমোদনের জন্য এটি উপস্থাপন করা হবে। প্রস্তাবে যে পাঁচটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ফেরত চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন রাজশাহী রেশম কারখানা ও ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন সিলেট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও চট্টগ্রামের ভালিকা উলেন মিলস লিমিটেড।

শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ফেরত চাওয়ার কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (সাবেক বেসরকারীকরণ কমিশন) দীর্ঘ সময় ন্যস্ত থাকায় কারখানাগুলোর অত্যাবশ্যকীয় জনবল ও নিরাপত্তাকর্মীদের বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাকে বহন করতে হচ্ছে। ফলে বছরে বিটিএমসিকে প্রায় ৯৩ লাখ টাকা এবং ও রেশম বোর্ডকে ৩২ লাখ টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি কারখানা বন্ধ থাকায় যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে পড়ছে ও উৎপাদন না থাকায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।  শ্রমিকরাও বেকার থাকছে, তাদের উৎপাদশীলতাও হ্রাস পাচ্ছে। তাই কারখানাগুলো চালু করা প্রয়োজন।’

এছাড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি পাওয়া গেছে বলে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মন্ত্রণালয় জানায়, ইতোপূর্বে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চতুর্থ (২৩ জুলাই ২০১৪) সভায় ‘ভবিষ্যতে কোন কারখানা বিক্রয় বা হস্তান্তরের বিষয়ে বেসরকারীকরণ কমিশনকে দায়িত্ব না দিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় স্বাধীনভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং সংসদীয় কমিটির এই সিদ্ধান্ত বেসরকারীকরণ কমিশনকে জানিয়ে দিতে হবে’ মর্মে সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। একই কমিটির পরবর্তী অর্থাৎ পঞ্চম (২১ আগস্ট ২০১৪) সভায় ‘বেসরকারি কমিশনে ইতোপূর্বে ন্যস্ত মিল-কারখানা এবং বস্ত্র ও পাট খাতের সমুদয় সম্পত্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফিরিয়ে আনার জন্য আশু পদক্ষেপ নিতে হবে’ মর্মে সুপারিশ গ্রহণ করা হয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ তদানীন্তন বেসরকারীকরণ কমিশনকে জানানো হলে ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর এক পত্রে কমিশন জানায়, অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া উল্লিখিত পাঁচটি কারখানা ফেরত প্রদানের কোনো সুযোগ নেই। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিসহ এটি অনুমোদনের জন্য বৈঠকে তোলা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০