পাইকারিতে রসুনের দাম বেড়েই চলেছে

 

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজারে খাতুনগঞ্জে রসুনের পাইকারি দাম অব্যাহতভাবে বাড়ছে। গত ১০ দিনের ব্যবধানে মানভেদে রসুনের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন রমজানে বাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকার আশঙ্কা করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন দুই হাজার ১৭০ থেকে ২ হাজার ১৭৫ ডলারে। প্রতি ডলারের মূল্য ৮০ টাকা ধরে হিসাব করলে প্রতি কেজি রসুনের দাম পড়ে ১৭৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১৭৪ টাকা। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পর্যন্ত এ খরচ পড়ছে। এরপর শুল্ক, গাড়ি ভাড়া, কুলি-মজুর, আড়তদারি খরচবাবদ কেজিপ্রতি রসুনের দাম সঙ্গে যুক্ত হয় আরও ১২ থেকে ১৫ টাকা। ফলে কেজিপ্রতি রসুনের দাম পড়ে ১৮৫-১৮৯ টাকা। কিন্তু পাইকারি বাজারে এখন আমদানিকৃত চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২১০-২১৫ টাকায়। এ অবস্থায় আমদানিকৃত চীনা রসুনে প্রতি কেজিতে লাভ করছে ২৫-২৬ টাকা পর্যন্ত। ডলারের দাম বৃদ্ধিকে অজুহাত দেখিয়ে সব ধরনের রসুনের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে রসুন বিক্রি করে লাভ করছেন খুচরা বিক্রেতারা।

চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে খাতুনগঞ্জে রসুন আমদানিকারক মেসার্স আজমীর ভাণ্ডারের পরিচালক এটিএম শামসুজোদ্দোহা শেয়ার বিজকে বলেন, কৃষিপণ্য বিক্রি করে কখনও লোকসান আবার কখনও লাভ হয়। বাজার বর্তমানে কিছুটা চাঙ্গা থাকলেও এ বছর লোকসানের পরিমাণই বেশি ছিল। প্রতি কনটেইনার (২২ টনে এক কনটেইনার) রসুন আমদানি করে চার-পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসান হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত নয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রসুন আমদানি হয়েছে ২৭ হাজার ৩৯ টন। এর মধ্যে জুলাই মাসে এসেছে দুই হাজার ৬২৬ টন, আগস্টে ৪ হাজার ৪৩৭, সেপ্টেম্বরে দুই হাজার ৯০৪, অক্টোবরে তিন হাজার ৫৮১, নভেম্বরে ২ হাজার ২৫৪, ডিসেম্বরে দুই হাজার ৩৯১, চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিন হাজার ১৯০, ফেব্রুয়ারি মাসে দুই হাজার ২৯২, মার্চে দুই হাজার ৪৩ ও এপ্রিল মাসে রসুন আমদানি হয়েছে এক হাজার ৩১৯ টন; যা অন্যান্য বছরের আমদানির চেয়ে বেশি। এরপরও হঠাৎ করে রসুনের দাম বাড়া নিয়েও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও চীনা রসুনের দাম ছিল পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ২০৫ টাকা। কিন্তু গত দুদিনে কেজিতে বেড়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা। খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ছে বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আর ভারতীয় রসুন এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে মাঝারি থেকে ভালো মানেরটা ৮০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল এটাতেও বেড়ে কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ১০০ টাকা হয়েছে। দেশি রসুন ছোট দানা ৮০ থেকে ৯০ এবং বড় দানা ৯০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করে খাতুনগঞ্জ বিভিন্ন আড়তের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, রসুন আমদানিতে আছেন হাতেগোনা কয়েকজন আমদানিকারক। এবার তারা সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন। আর চায়নার দেখাদেখি ভারতীয় রসুনের দামও বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানিকারকরা বলছেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের আমদানি খরচও বেড়ে গেছে। দাম বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে আরেক রসুন ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন বলেন, গত তিন-চার মাস তো লোকসান দিয়ে ব্যবসা করেছি। কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকার ওপর লোকসান দিয়েছি। আর এখন বাজার একটু বাড়তির দিকে। লোকসান একটু হলে পুষিয়ে নিতে পারব। ধারণা করছি আর বাড়বে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে সবচেয়ে বেশি রসুন আবাদ হয় নাটোর জেলায়। এছাড়া রাজশাহী, পাবনা ও ফরিদপুর জেলায় ব্যাপকভাবে রসুন আবাদ হচ্ছে। রসুন আবাদ করে ভালো মুনাফা পাওয়ায় কৃষকরা দিন দিন এতে উৎসাহী হলেও দানা বড় হওয়ায় চীনা রসুন অনেকের কাছে বেশ পছন্দের। ফলে বাজারের আমদানিকৃত রসুনের সরবরাহ ও বিক্রয় বেশি। এতে আমদানিকারকরা মুনাফা বাড়াছেন।

উল্লেখ, দেশে বছরে মোট রসুনের চাহিদা রয়েছে পাঁচ লাখ টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রসুন উৎপাদন হয়েছে চার লাখ ৩০ হাজার টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় চার লাখ ৬৫ হাজার টনে। চাহিদার বাকি রসুন চীন থেকে আমদানি করা হয়।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০