পাইপলাইনে থাকা ঋণের প্রায় অর্ধেকই উচ্চ সুদের!

ইসমাইল আলী: স্বল্পোন্নত (এলডিসি) ও নিম্ন আয়ভুক্ত থাকায় একসময় বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান বাংলাদেশকে অনেক কম সুদে ঋণ দিত। তবে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে থাকায় গত কয়েক বছরে এ তিন উৎসের ঋণের সুদহারও বেড়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের পাইপলাইনে রয়েছে ৪১ বিলিয়ন ডলার ঋণ। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ঋণই কঠিন শর্তের অথবা উচ্চ সুদের।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যমতে, গত অর্থবছর শেষে পাইপলাইনে থাকা বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৮ দশমিক ৪৫৩৬ বিলিয়ন ডলার। তবে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন ঋণের কমিটমেন্ট পাওয়া গেছে ছয় দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। আর এ সময় ছাড় হয়েছে চার দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। এতে গত ডিসেম্বর শেষে পাইপলাইনে থাকা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৩৭৯৭ বিলিয়ন ডলার।

পাইপলাইনে থাকা ঋণের মধ্যে রাশিয়া ও চীন ছাড়াও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) প্রভৃতি সংস্থার ঋণের শর্ত কঠিন অথবা সুদের হার উচ্চ। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক এবং এডিবিও কঠিন শর্তে ঋণ দেয়া শুরু করেছে। এর মধ্যে ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে মাত্র দুই দশমিক ৩৪৮ মিলিয়ন ডলার ঋণের সুদহার ধরা হয়েছে চার দশমিক ৮২ শতাংশ। এছাড়া বিদ্যুৎ বিতরণ আধুনিকায়ন প্রকল্পে সুদ নেয়া হচ্ছে তিন দশমিক ১০ শতাংশ। প্রকল্পটিতে ১১৯ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক।

এদিকে ১৯৮২ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের ঋণের সুদহার ছিল শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। সঙ্গে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ নিত সংস্থাটি। তবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বেশিরভাগ ঋণে বিশ্বব্যাংক এক দশমিক ২৫ শতাংশ সুদহার এবং শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ। এতে সুদহার পড়ছে দুই শতাংশ। এছাড়া শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ কমিটমেন্ট চার্জও নিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।

অন্যদিকে এডিবির বেশিরভাগ ঋণের সুদহার ছিল দুই শতাংশ। সঙ্গে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ নিত সংস্থাটি। তবে গত কয়েক বছর এ শর্তের পাশাপাশি বাণিজ্যিক শর্তেও বাংলাদেশকে ঋণ দিচ্ছে এডিবি। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদ নিচ্ছে সোফর+০.৭৬ শতাংশ। বর্তমানে সোফর (সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট) পাঁচ দশমিক ৩২ শতাংশ। এতে এডিবির ঋণের সুদহার পড়ছে প্রায় ছয় শতাংশ। আবার জাপান সরকার একসময় ঋণের সুদহার রাখত শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ। তবে এটা বৃদ্ধি পেয়ে শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে এক শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে।

এর বাইরে এআইআইবির ঋণে সুদহার লাইবর+১.৬ শতাংশ। বর্তমানে লাইবর (লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেট) পাঁচ দশমিক ৪২ শতাংশ। এতে এআইআইবির ঋণের সুদহার পড়ছে ৭ শতাংশের বেশি। রাশিয়ার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের সুদহার লাইবর+১.৭৫ শতাংশ। এ ঋণের সুদহারও পড়ছে সাত শতাংশের বেশি। আর চীনের ঋণে সুদহার দুই থেকে তিন শতাংশ। সঙ্গে সার্ভিস চার্জ বা কমিটমেন্ট চার্জ আছে। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাষ্ট্রীয় ঋণের (এলওসি) সুদহার এক শতাংশ।

ইআরডির তথ্যমতে, গত ডিসেম্বর শেষে পাইপলাইনে সবচেয়ে বেশি ঋণ ছিল বিশ্বব্যাংকের। সংস্থাটির কাছে বাংলাদেশের জন্য প্রতিশ্রুত ঋণ রয়েছে আট দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জাপান সরকারের প্রতিশ্রুত ঋণ রয়েছে সাত দশমিক ৮৭৯১ বিলিয়ন ডলার। এডিবির ঋণ রয়েছে পাইপলাইনে পাঁচ দশমিক ৭৫২৫ বিলিয়ন ডলার ও ভারতের পাঁচ দশমিক ৭১০৮ বিলিয়ন ডলার।

রাশিয়ার ঋণ অবশিষ্ট রয়েছে চার দশমিক ৮৪৭২ বিলিয়ন ডলার, চীনের তিন দশমিক ২১৩৭ বিলিয়ন ডলার, এআইআইবির এক দশমিক ৬০৩৩ বিলিয়ন ডলার এবং অন্যান্য সংস্থার তিন দশমিক ৭৬৩১ বিলিয়ন ডলার। তবে অন্যান্য সংস্থার ঋণের বেশিরভাগই কঠিন শর্তের বা উচ্চ সুদের।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০