‘পাইপলাইনে ভারতের তেলের পরিবহন খরচ অর্ধেকে নামবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাইপলাইন চালু হলে জ্বালানি পরিবহনের খরচ অর্ধেক কমে যাবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল শুক্রবার দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন’-এর জ্বালানি জমা হওয়ার টার্মিনাল পরিদর্শনকালে তিনি একথা বলেন।

আগামী ১৮ মার্চ তেল পরিবহনে উভয় দেশের মধ্যে স্থাপিত ১৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রথম পাইপলাইন চালু হবে। এ লাইন দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত তেল পরিবহন করা হবে।

সেদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এটি উদ্বোধন করবেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে গতকাল প্রতিমন্ত্রী প্রকল্প পরিদর্শনে আসেন।

প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পাইপলাইন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। পাবর্তীপুরে তেল এসে জমা হওয়ার টার্মিনালের অনেক কাজও এগোলেও কিছু বাকি রয়েছে। বাস্কেট ফিল্টারিং প্রযুক্তি সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হলেও নতুন প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংকের একটিও প্রস্তুত হয়নি। ফলে প্রকল্প এলাকার বাইরে থাকা বিপিসির পুরোনো ট্যাংকেই আপাতত ভারত থেকে আসা জ্বালানি সংরক্ষণ করতে হবে।

নতুন এ পাইপলাইন জ্বালানি খাতে যুগান্তকারী ইতিহাস তৈরি করেছে মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাশ্রয়ে জ্বালানিপ্রাপ্তি ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। নিরবচ্ছিন্নভাবে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুর ১৫০ বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ করা যাবে। এখন আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যে তেলটা আমরা আনছি, সেটার প্রতি ব্যারেলের প্রিমিয়াম প্রাইস পড়ছে প্রায় ১১ ডলার। এ পাইপলাইনের মাধ্যমে আমাদের খরচ পড়বে পাঁচ ডলার ৫০ সেন্ট। তার মানে আমরা প্রায় ছয় ডলারের মতো প্রিমিয়াম বাবদ সাশ্রয় করব।

বাংলাদেশ অংশে ১২৬ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশে পাঁচ কিলোমিটার রয়েছে এ পাইপলাইনের। ভারতীয় কোম্পানির অর্থায়নেই এটি নির্মাণ করা হয়েছে।

খরচ সাশ্রয়ের সুযোগ তৈরির হওয়ার তথ্য তুলে ধরে নসরুল হামিদ বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে বড় জাহাজে করে ডিজেল আমদানি করতে হয়। সেখান থেকে ছোট জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে বা খুলনার দৌলতপুর ঘাটে নিতে হতো। সেখান থেকে তেলের ওয়াগন করে এই পার্বতীপুরে আসত। বিশাল সময় ও প্রচুর অর্থ খরচ হতো। ধর্মঘট ও অন্যান্য কারণে কখনও কখনও তেল সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা যাচ্ছিল না।

এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের সহায়তায় নির্মিত এ পাইপলাইনে সময় ও ব্যয়ে অনেক সাশ্রয় হবে বলে জানান তিনি।

ভারতের ডিজেলের মান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মান তো আমরা নিয়ন্ত্রণ করব। এখানে কোনো মানের প্রশ্ন নেই। আমরা একটা স্পেসিফিকেশন ঠিক করে দিয়েছি, তারা সেই স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী তেল সরবরাহ করবে। তেলের মধ্যে সালফারের উপস্থিতি থাকবে ১০ পিপিএম, যেটা একেবারেই বিশ্বমানের। আমাদের এন্ডে সেই মান যাচাই করে দেখা হবে। এই পাইপলাইনকে ঘিরে এলাকায় জ্বালানির একটি বলয় তৈরি হয়েছে। এখানে ২৯ হাজার ট্যাংক টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। আগে থেকেই রয়েছে ১৫ হাজার টনের ট্যাংক টার্মিনাল। এই অঞ্চলের জন্য প্রায় ৬০ দিনের স্টোরেজ আমরা এখানে করতে পারব।’

ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম তিন বছর বছরে দুই লাখ টন করে, পরের তিন বছর তিন লাখ টন করে, পরের চার বছর পাঁচ লাখ টন করে এবং পরবর্তী বছরগুলোয় বার্ষিক ১০ লাখ টন করে জ্বালানি ভারত থেকে বাংলাদেশে আসবে। নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেডের (এনআরএল) বিপণন টার্মিনাল থেকে শিলিগুড়ি হয়ে বিপিসির পার্বতীপুর ডিপোয় আমদানি করা তেল আসবে।

২০২০ সালের মার্চে এ পাইপলাইনের কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কভিড মহামারির কারণে কাজ এক বছর পিছিয়ে যায়। এর আগে ২০১৭ সালের এপ্রিলে পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আমদানির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সই হয়। একই বছরের অক্টোবরে এনআরএল বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানির জন্য বিপিসির সঙ্গে ১৫ বছর মেয়াদি আরেকটি চুক্তি করে।

২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাইপলাইনের কাজ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০