Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 8:53 pm

পাইপ ও ফিটিংস উৎপাদন সংকটে পড়তে পারে

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: পিভিসি পাইপ এবং ফিটিংস উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল রেজিন। এ পেট্রোকেমিক্যাল পাইপ ভিনাইল ক্লোরাইড বা পিভিসি রেজিনের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছরের ব্যবধানে ২২০ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি জাহাজ ভাড়া, ডলারের বিনিময় মূল্য, জ্বালানি পণ্যের দামের কারণে পিভিসি পাইপ এবং ফিটিংস উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণেও বেশি। কিন্তু বাজারের চাহিদা নি¤œমুখী ও প্রতিযোগিতা থাকায় পণ্যের দাম ৪০ শতাংশের বেশি বাড়ানো সম্ভব হয়নি। এতে উৎপাদন চালু রাখায় হিমশিম খেতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে।

পিভিসি কোম্পানিগুলো জানা যায়, পিভিসি রেজিন হচ্ছে এক ধরনের পেট্রোকেমিক্যালস পণ্য। শতভাগ আমদানিনির্ভর পণ্যটি সাধারণত চীন, তাইওয়ান, জাপান, আমেরিকা, ভিয়েতনাম থেকে আমদানি হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় তাইওয়ান থেকে। বর্তমানে প্রতি টন পিভিসি রেজিনের দাম এক হাজার ৯০০ ডলার, যা গত বছরের অক্টোবরে ছিল ৯০০ ডলার। একই সঙ্গে প্রতি টন রেজিন আমদানিতে জাহাজ ভাড়া ১০০ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০০ ডলার। আর জ্বালানি, পরিবহন খরচ, ডলরের বিনিয়োগ মূল্য প্রভৃতি কারণে অন্যান্য খরচও দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ পিভিসি রেজিন দিয়ে উৎপাদিত পিভিসি পণ্য অর্থাৎ প্লাস্টিকের চেয়ার, টেবিল, বালতি, গামলা, প্লেট, গ্লাস, মগ, জগ, পানির ট্যাংক, বোরিং পাইপ প্রভৃতির দাম ৪০ শতাংশ বাড়ানো হলেও বাজারের তেমন চাহিদা নেই। এতে উৎপাদন চালু রাখা নিয়ে হিমশিমে খেতে হচ্ছে বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে।

নির্মাণ শিল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, পিভিসি পাইপ সাধারণত নির্মাণকাজে ব্যবহƒত হয়। ভবন বা অন্যান্য অবকাঠামোর পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য লাইন স্থাপনে এ পাইপের ব্যবহার হয় বেশি। আর লোহা বা তামার তুলনায় ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ায় এর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। দেশে কয়েকশ’ প্রতিষ্ঠান পিভিসি পাইপ তৈরি করলেও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, বেঙ্গল গ্রুপ, গাজী গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, বিআরবি গ্রুপ, মদিনা গ্রুপ, আনোয়ার গ্রুপ, ন্যাশনাল পলিমার গ্রুপ, লিরা গ্রুপ পিভিসি পাইপ উৎপাদনে শীর্ষে। এ পাইপের বাজার বছরে ২০ শতাংশ হারে বড় হচ্ছে। বর্তমানে দুই দশমিক সাত মিলিমিটার পুরুত্ব ও ১১০ এমএম ডায়ারের প্রতি ফুট পাইপের দাম কোম্পানি ভেদে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। আবার চার ইঞ্চি ব্যাসার্ধের বোরিং পাইপের দাম কোম্পানি ভেদে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। এছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের পিভিসি পাইপ রয়েছে।

একাধিক পাইপ ও ফিটিংস কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেন, কভিডের কারণে ২০২০ সালের শুরু থেকে চলতি বছরেরও কয়েক মাস পর্যন্ত নির্মাণ কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছিল। কয়েক মাস আগে থেকে নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর পিভিসি পাইপের চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। কিন্তু রেজিনের দামসহ সামগ্রিকভাবে পিভিসি পাইপের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। ফলে এর দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই।

এ বিষয়ে আজিজ পাইপসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আবছার বলেন, এখন আন্তর্জাতিক বাজারের টনপ্রতি রেজিনের দাম এক হাজার ৯০০ ডলার, যা কয়েকদিন আগেও এক হাজর ৩০০ ডলার ছিল। আর গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯০০ ডলার। কিন্তু আমরা দাম ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে পণ্য বিক্রয় করতে পারছি না। এখন আমাদের উৎপাদিত পণ্য ৮০ শতাংশ পড়ে (মজুত) আছে। এছাড়া ব্যাংকিং জটিলতার কারণে কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় স্থানীয় সরবরাহকারী থেকে বেশি দামে রেজিন কিনতে হয়। এমনিতে দৈনিক পাঁচ লাখ টাকা করে লোকসানে আছি। আর উৎপাদন চালু রাখলে ২০ লাখ টাকা লোকসান হয়। তাই গত ৭ নভেম্বর থেকে উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।