নিজস্ব প্রতিবেদক: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক দেশের তিন মোবাইল অপারেটরকে বিভিন্ন ফি ও মূল্য সংযোজন কর পরিশোধের আদেশ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মামলার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন। তিনি বলেন, মোবাইল অপারেটররা বিটিআরসির পাওনা বাবদ প্রকৃত টাকা প্রদান না করে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আকারে অন্তর্ভুক্ত করে (যেমন-১০০ টাকা মূল টাকা হলে বিটিআরসিকে দিয়েছিল ৮৫ টাকা অর্থাৎ বাকি ১৫ টাকা ভ্যাট হিসেবে দেখিয়েছিল) দিয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট অপারেটরগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্য আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত না মানলে আইনিভাবে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বিটিআরসি।
গতকাল রোববার বিকালে বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, সরকারের অর্থ মানে সাধারণ মানুষের টাকা, সে টাকা অবশ্যই অপারেটরদের দিতে হবে। বিটিআরসি জনগণের অর্থ আদায়ে বদ্ধপরিকর।
বিটিআরসি যত আইন কানুন ও পলিসি প্রণয়ন করেছে, তা দেশের জনসাধারণের কল্যাণের জন্য উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বিটিআরসি এ দেশে টেলিযোগাযোগ খাতকে একটি সময়োপযোগী খাত হিসেবে তুলে ধরতে চায়, সেবার মানোন্নয়নে মনিটরিংয়ের পাশাপাশি রাজস্ব আদায় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য বিটিআরসি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব এবং জনগণের অর্থ। অপারেটরদের এ অর্থ অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।
অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী বলেন, বিটিআরসি সরকারের কোষাগারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব দিয়ে আসছে। রাজস্ব যাতে সঠিকভাবে আদায় করা যায়, সেজন্য রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়ার বাস্তবায়নের পাশাপাশি রাজস্ব নীতি প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ বলেন, অপারেটরগুলোর বিনিয়োগ এবং কস্ট ম্যানেজমেন্টের বিষয় তাদের নিজস্ব বিষয়। অপারেটরগুলোর লাভ-ক্ষতির বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিবেচ্য বিষয় নয় এবং বিটিআরসির প্রাপ্য তাদের পরিশোধ করতে হবে।
লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু জানান, গত ২২ নভেম্বর পর্যন্ত গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসিকে প্রদেয় পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ১৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, বাংলালিংকের কাছ থেকে বিটিআরসিকে প্রদেয় অর্থের পরিমাণ ৬২৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা, রবির কাছ থেকে বিটিআরসিকে প্রদেয় অর্থের পরিমাণ ৫৬৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, এয়ারটেলের কাছ থেকে বিটিআরসিকে প্রদেয় অর্থের পরিমাণ ৫৯ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। তিনি জানান, বিটিআরসি অপারেটরগুলো থেকে শতভাগ টাকা পাবে, এক্ষেত্রে এর মধ্যে ১৫ ভাগ ভ্যাট যুক্ত করা যাবে না।
বিটিআরসির আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, অপারেটরগুলোর কাছ থেকে অন্যায়ভাবে কোনো অর্থ দাবি করা হয়নি এবং বিটিআরসি তার প্রাপ্য অর্থ পাবে। ভ্যাট প্রদানে রেয়াত সুবিধা সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় জানিয়ে তিনি বলেন, রেয়াত পাওয়ার জন্য যেসব বিষয় দরকার, তা এখানে বিদ্যমান নেই।
বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের পরিচালক তারেক হাসান সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসাইন, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এহসানুল কবীর, স্পেকক্ট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।