Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 12:39 am

পাকিস্তানি মুদ্রার রেকর্ড দরপতন ১ ডলার এখন ২৮৮.৫ রুপি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির মুদ্রা রুপি ১ দশমিক ৩ শতাংশ পতন হয়ে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দর দাঁড়িয়েছে ২৮৮ দশমিক ৫ রুপিতে। খবর: রয়টার্স।

দুর্নীতির মামলায় দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করার পরদিন গতকাল বুধবার রুপির দরপতন হয়েছে। ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পাকিস্তানজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ-সমাবেশ চলছে। এর মধ্য দিয়ে মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির আরও দরপতন হয়েছে। গতকাল দেশটির আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দর দাঁড়িয়েছে ২৮৮ দশমিক ৫ রুপিতে। এর আগে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ২৮৮ দশমিক ৪২ রুপি অর্থাৎ রুপির মান এখন দেশটির ইতিহাসের সর্বনি¤œ পর্যায়ে।

পাকিস্তান-কুয়েত ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির গবেষণাপ্রধান সামিউল্লাহ তারিক বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেলআউট নিয়ে অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক ডামাডোলের কারণে রুপির এ দরপতন হয়েছে। তিনি মনে করেন, এটা বাজারের চাহিদা-সরবরাহের বিষয় নয়; অনিশ্চয়তার কারণে এমন হচ্ছে।

আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডওয়েবের তথ্য মতে, পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক বাজারে বন্ডের দাম কমেছে শূন্য ডলার চার সেন্ট। বন্ডের নি¤œমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে।

গত মার্চে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান জানায়, ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির রেকর্ড দরপতন হয়ে ২৮৫ দশমিক ০৯ রুপিতে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা এ রেকর্ড পতনকে আইএমএফের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের অচলাবস্থাকে দায়ী করেছেন। তখন এক্সচেঞ্জ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তানের (ইসিএপি) সেক্রেটারি জেনারেল জাফর পারাচা পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনকে বলেন, আইএমএফ পাকিস্তানকে বর্তমান আফগান ট্রেড রেটে ডলার বাণিজ্য করতে বলেছে। সরকার বৈদেশিক মুদ্রার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বৈদেশিক মুদ্রা কোম্পানিগুলোর ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর অনেক বিধিনিষেধ আরোপের কারণে ডলার আসে না বা যায় না। একই সময় টপলাইন সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ সোহেল ডনকে বলেন, আইএমএফ থেকে অর্থায়নে বিলম্বের কারণে মুদ্রাবাজারে অনিশ্চয়তা থেকে রেকর্ড পতন হয়েছে।

এদিকে মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস ও ব্লুমমার্গের প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে ভারতের ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, পাকিস্তানের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫০ কোটি ডলারে নেমেছে। এ অর্থ দিয়ে এক মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এ পরিস্থিতিতে জুনের পর আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন মুডি’স ইনভেস্টরের সার্বভৌম বিশ্লেষক গ্রেস লিম। আইএমএফের ঋণ না পেলে দেশটির পরিস্থিতি সঙ্গিন হয়ে পড়বে।

আইএমএফের ঋণের কিস্তি না পেলে পাকিস্তান ঋণখেলাপি হয়ে যেতে পারে। জুনের পর তার অর্থের উৎস নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে বলে মুডি’স ইনভেস্টর সার্ভিস জানিয়েছে। আইএমএফ শর্ত ছাড়া ঋণ দেয় না। সেই শর্তের বেড়াজালে আটকে পড়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তান সরকার ঋণের কিছু শর্ত পূরণ করতে না পেরে ৬৫০ কোটি ডলারের ঋণ আটকে গেছে।

ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে পাকিস্তান সরকার আগেই আমদানি সীমিত করেছে। এখন রুপির আরও দরপতনের কারণে দেশটির নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবে বাড়বে। মানুষের বিপদ বাড়বে আরও। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটও হতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অক্ষমতার শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে পাকিস্তান। ২০২২ সালের প্রবল বন্যা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে দেশটিতে খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হয়। এ দুটি কারণে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট তীব্র করেছে। সেই সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, যার মূল্য দিতে হচ্ছে দেশটির সাধারণ মানুষকে।

অথচ একসময় ভারতের চেয়ে পাকিস্তানে মাথাপিছু আয় ছিল বেশি। কিন্তু ভুল নীতি ও সামরিক শাসনের অভিঘাতে পাকিস্তান এখন অনেকটাই পিছিয়ে। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত তারা ২৩ বার আইএমএফের সহায়তা নিয়েছে। আর কোনো দেশ এ সময়ে এতবার আইএমএফের কাছে যায়নি।