শেয়ার বিজ ডেস্ক:পাকিস্তানে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৩১ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরো গত বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে আরও বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির অর্থনীতিবিদরা। খবর: ডন।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন জানিয়েছে, অর্থনৈতিক সংকটে জর্জর পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে আরও খারাপ হচ্ছে। দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রয়োজনীয় পণ্যের দামে রীতিমতো আগুন লেগেছে। দিন দিন দেশটিতে বেড়ে চলছে মূল্যস্ফীতি। দেশটিতে খাবার, পানীয় এবং পরিবহন ব্যয় ৪৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
এর আগে ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে পাকিস্তানে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ। গত মাসের মতো গত পাঁচ দশকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি ইসলামাবাদকে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো আরও জানিয়েছে, জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) বেড়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের তুলনায় পানীয় ও তামাকজাত পণ্যের দাম বেড়েছে ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ। সিগারেটের ওপর কর বৃদ্ধির কারণে মূলত এমনটি হয়েছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। অপরদিকে খাবার ও নন-অ্যালকোহলিক পানীয়র মূল্য গত এক বছরে ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।
গত মাসে পাকিস্তান সরকার সম্পূরক আইন পাস করে। এর মাধ্যমে পণ্যের ওপর আরোপিত কর ১৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৮ শতাংশ করা হয়েছে। মূলত চলমান অর্থবছরে আরও ১৭০ বিলিয়ন রুপি কর আদায়ের লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাহবাজ শরীফের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার।
এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৬৫০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তির ১০০ কোটি ডলার পেতে কর, জ্বালানিসহ সব কিছুর দাম বাড়িয়েছে পাকিস্তান সরকার। আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য এবার বিদ্যুতের গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত সারচার্জ আদায়ের অনুমোদন দিয়েছে দেশটি। একেই ‘আইএমএফের শর্তে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন করেছে ডন ও জিও নিউজ। গত বুধবার পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চলতি মাস থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৮২ রুপি সারচার্জ আদায়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সারচার্জ বা সম্পদ কর হচ্ছে এক ধরনের মাশুল, যা ব্যক্তির সম্পদের দলিলমূল্যের ওপর আদায় করা হয়। জানা গেছে, ঋণছাড়ের জন্য আইএমএফের শর্ত মেনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুতের গ্রাহকদের কাছ থেকে ইউনিটপ্রতি গড়ে ২ দশমিক ৬৩ রুপি সারচার্জ নেয়া অব্যাহত রাখবে পাকিস্তান।
পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্যমতে, দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে ৩০০ কোটি ডলারের নিচে নেমেছে, যা দিয়ে বড়জোর তিন সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এ অবস্থায় চুক্তির বাকি অর্থ ছাড় করতে মরিয়া পাকিস্তান সরকার। কিন্তু দফায় দফায় বৈঠকের পরও ঋণের সব শর্ত নিয়ে একমত হতে পারেনি দু’পক্ষ। কর বাড়ানো, ভর্তুকি বাতিলের মতো একাধিক কঠোর শর্ত দিয়েছে আইএমএফ।
এছাড়া গত কয়েক মাস ধরে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের রুপির যে দরপতন চলছে সেটি অব্যাহত রয়েছে। গত বুধবারও ডলারের বিপরীতে রুপির মূল্য ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। এদিন ২৬৬ দশমিক ১১ দরে ডলারের সঙ্গে রুপির লেনদেন হয়। পাকিস্তানের ব্রোকারেজ হাউস জেএস গ্লোবাল জানিয়েছে, মুদ্রার এত দরপতন ১৯৯৯ সালের পর এ প্রথম ঘটেছে। মুদ্রা বিনিময়কারী কোম্পানিগুলো বলেছে, তারা দেশের স্বার্থে খোলাবাজারে বিনিময় হারের সীমাটি তুলে নিয়েছেন। কারণ এটি পাকিস্তানের অর্থনীতিতে কৃত্রিম বিকৃতি ঘটাচ্ছে।
ডলারের সংকট থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ঋণ পরিশোধসহ বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য রাখতে পারছে না পাকিস্তান। আর্থিক পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে পাকিস্তানকে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় আইএমএফ। গত বছর বন্যার পর দেশটিকে সাহায্য করার জন্য আরও ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছিল আইএমএফ।