কামরুল হাসান চৌধূরী: গ্রামে প্রবেশের অনেক দূর থেকেই পাওয়া যায় পাখির কিচিরমিচির শব্দ। পাখির কলকাকলিতে সবসময় মুখর থাকে গ্রামটি। এ কিচিরমিচির-কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে গ্রামবাসীর। পাখিদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মগলিশপুর গ্রাম।
নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে মহাদেবপুর উপজেলা। এ উপজেলা থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে মগলিশপুর গ্রাম।
গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলামের পুকুরপাড়ে বাঁশঝাড়ে বাসা বেঁধেছে পাখিগুলো। পাখিরা স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রামের গাছে গাছে বিচরণ করছে। ঝাঁকে-ঝাঁকে ডানা মেলে উড়ে চলছে। ইতোমধ্যে অনেক পাখি ডিম দেওয়া শুরু করেছে। এখানে দেখা মিলছে বিভিন্ন ধরনের শামুকখোল, জ্যাঠা বক, কানি বক, পানকৌড়ি, রাতচোরা, ডাহুক, দোয়েল, ঘুঘু, শালিক, বাবুইসহ নানান জাতের দেশি পাখির।
গ্রামের মানুষ প্রকৃতিপ্রেমী। পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে পাখি রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। গ্রামের ভেতরে গাছ কাটা ও উচ্চ শব্দে আওয়াজ এক প্রকার নিষিদ্ধ বলা চলে।
বাঁশঝাড়ের মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ বিক্রি করে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় পার করতাম। তবে গত তিন মাসে বাঁশ কাটিনি।’ বাড়ির কাজের জন্য বাঁশের প্রয়োজন ছিল তার। এ কাজের জন্য এখান থেকে বাঁশ না কেটে ১৪ কিলোমিটার দূরে শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় বাঁশ নিয়ে এসেছেন।
গ্রামের গৃবহধূ সুলতানা বেগম বলেন, প্রথমে এসব পাখির শব্দ ও বিষ্ঠা নিয়ে কিছুটা সমস্যা পোহাতে হয়েছিল। সেই সময় পেরিয়ে গেছে। এখন গ্রামের সবাই পাখির প্রতি মমতাবোধ করছেন। বাঁশঝাড়ের নিচে পুকুর থাকলেও পাখিরা কোনো মাছ খায় না। সারাদিন বাইরে ঘুরেফিরে বিকালে বাসায় ফেরে। তখন বেশি দেখা মেলে। যখন আকাশে উড়ে বেড়ায় মনে হয় আকাশ মেঘ করেছে।
স্থানীয়রা গ্রামটিকে ‘পাখিগ্রাম’ নামে ডেকে থাকেন। পাখি দেখা ও ফটোসেশনের জন্য নওগাঁ থেকে এখানে এসেছিলেন ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পাখির কলকাকলিতে আমি মুগ্ধ। এক সঙ্গে এত পাখি দেখার সৌভাগ্য কখনও হয়নি। পাখির নিরাপদ আশ্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয়রা।
নওগাঁ