নিজস্ব প্রতিবেদক: কিং স্টার ব্যান্ডের অবৈধ বিদেশি বেবি কম্বলের একটি চালান আটক করেছে কুমিল্লা কাস্টমস ও ভ্যাট প্রিভেন্টিভ টীম। বৃহস্পতিবার চৌদ্দগ্রাম, বিশ্বরোড থেকে একটি বড় কাভার্ড ভ্যানসহ কম্বলগুলো আটক করা হয়। কুমিল্লা ভ্যাটের উপ কমিশনার উত্তম বিশ্বাস সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম থেকে পরিবাহিত অবৈধ বিদেশি বেবি কম্বল আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রিভেন্টিভ টীম আবারো ওঁত পেতে চৌদ্দগ্রাম, বিশ্বরোড থেকে একটি বড় কাভার্ড ভ্যানসহ (ঢাকা মেট্রো নং ট-১৬-১২১৮) ৩ হাজার ৮৪০ পিস বেবি কম্বল আটক করে। কিং স্টার বেবি ব্লাঙ্ককেট ব্যান্ডের কম্বলগুলো চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে পাচার হয়েছে বলে গোপন সংবাদদাতা জানিয়েছেন।’
উত্তম বিশ্বাস বলেন, ‘বহুদিন থেকে প্রকৃত আমাদানিকারকরা শুল্কমুক্তভাবে গার্মেন্টসের নামে আমদানিকৃত শাটিং স্যুট, পর্দার কাপড় ও কম্বল খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগ করে আসছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে গোপন সংবাদদাতা নিয়োজিত করে কুমিল্লা কাস্টমস ও ভ্যাট টীম। সংবাদদাতা জানায় পণ্যসমূহ (বেবি কম্বল) ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে আমদানি হয় এবং স্থানীয় কোন ফ্যাক্টরিতে প্যাকিং ও মেইড ইন কোরিয়া সীল ব্যবহার করে বিক্রি করা হয়।’
আরও বলেন, ‘এই অবৈধ কাজে দুই ধরনের প্রতারণা দৃশ্যমান হয়। একটি হচ্ছে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে আমদানি করে স্থানীয় কোন ফ্যাক্টরিতে প্যাকিং ও মেইড ইন কোরিয়া সীল ব্যবহার করা হয় এবং স্থানীয় বাজারে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। পাক পাঞ্জাতন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির কাভার্ড ভ্যান আল আহাদ ট্রান্সপোর্ট এই পরিবহনের জন্য ভাড়া করে। ইতোপূর্বে এই পাক পাঞ্জাতন ট্রান্সপোট এ রকম অবৈধ গার্মেন্টস ও পাচারের পণ্য পরিবহন করছে বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।’
উপ কমিশনার বলেন, ‘রাত ৩টায় গাড়ি পৌঁছানোর কথা থাকলেও যৌথ প্রিভেন্টিভ ভোর ৪ টায় গাড়িটি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, বিশ্বরোড পৌঁছায়। গোপন সংবাদদাতার সকল তথ্য যাচাই করা হয়। গাড়ি চালক অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। কর্মকর্তাদেরকে কিছু ভুয়া কাগজপত্র দেখায়। অভিযোগের মিল পেয়ে কর্মকর্তারা গাড়িটি আটক করে। আটককৃত বেবি কম্বল পরিমাণ ৩ হাজার ৮৪০ পিস বা ২৭০০ কেজি। যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ১৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। পরিহারকৃত শুল্ককর ১২ লাখ ২৯ হাজার ৯৩৬ টাকা অর্থাৎ শুল্ক পরিশোধিত মূল্য ২৬ লাখ ৬ হাজার ৯৩৬ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক এ চক্রটি অত্যন্ত চতুর, শক্তিশালী ও সংগঠিত বলে জানা গেছে। এ চোরাই পণ্য আটকে ঝুঁকি বিবেচনায় বিশেষ সর্তকতা নিতে হয়। এর আগে কুমিল্লাতে এ ধরনের পণ্যবাহী কার্ভাডভ্যান আনলোড করে অন্য কার্ভাডভ্যানে উঠিয়ে চোরাইপণ্য পার করা করার প্রবণতা ছিল। উদ্ধারকৃত মালামাল কুমিল্লা বিভাগীয় শুল্ক গুদামের রাখা হয়েছে। দি কাস্টমস এ্যাক্ট ১৯৬৯ এর আওতাধীন মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন আছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পাঠ পাঞ্জাতন ট্রান্সপোর্ট অবৈধ পণ্যসমূহ পরিবহনের জন্য বিভিন্ন এজেন্সি ট্রান্সপোট ব্যবহার করে থাকে। এ চোরাকারবারিদের শেকড় অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। গুটি কয়েক চোরকারবারির জন্য এর সুনাম নষ্ট হচ্ছে। অতিক্রম নয় ব্যতিক্রম প্রত্যয়ে জিরো টলারেন্সের আওতায় চলছে সাঁড়াশি অভিযান। এ বন্ডেড পণ্য বাজারে বিক্রির এমন আরো তথ্য আসছে। যে সকল ট্রান্সপোর্ট অবৈধ পণ্য পরিবহন করে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।’
অপরদিকে, বুধবার (১৯ আগস্ট) কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন ছয়টি জেলায় এক যোগে অভিযান চালানো হয়েছে। বিশেষ করে কুরিয়ার সার্ভিসসমূহে তল্লাশি চালানো হয়। কারণ কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে নকল ও ব্যবহৃত ব্যান্ডরোলযুক্ত তামাক পণ্য বিশেষ করে সিগারেট, বিড়ি ও গুল বাজারজাত করা হচ্ছে। একটি চক্র রাজস্ব ফাঁকি দিতে এসব তামাক পণ্য বাজারজাত করে আসছে।
এছাড়া অভিযানে বকেয়া ভ্যাট আদায় করা হয়। ছয়টি জেলায় ৩১ লাখ ২৯ হাজার ৭৬৪ টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ডংজিন লংজারভিটি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৬৫ কার্টুন ব্যাটারি থেকে ছয় লাখ ৮২ হাজার ৩৬৪ টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়। কুমিল্লায় তিনটি ইটভাটা থেকে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকার বকেয়া রাজস্ব আদায় করা হয়। ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয় ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা, নোয়াখালী দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা, লক্ষ্মীপুর ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা, চাঁদপুর এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ টাকা বকেয়া আদায় করা হয়।
###