নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ বা অর্থ ফিরিয়ে আনতে গঠিত টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করা হয়েছে। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মো. জেহাদ উদ্দিনের সই করা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ২০১৩ সালের ২৮ মে গঠিত বিদেশে পাচার করা সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্স সরকার পুনর্গঠন করেছে।
পুনর্গঠিত টাস্কফোর্সে সদস্যসংখ্যা দুজন বাড়ানো হয়েছে। টাস্কফোর্সে অ্যাটর্নি জেনারেল অব বাংলাদেশকে আহŸায়ক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) উপপ্রধান কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেনÑবিএফআইইউ’র প্রধান কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব (কেন্দ্রীয় ব্যাংক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব, এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের মহাপরিচালক; কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জাতিসংঘ), সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ)।
প্রজ্ঞাপনে টাস্কফোর্সের তিনটি কার্যপরিধি উল্লেখ করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে, বিদেশে পাচার করা সম্পদ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে ফেরত আনার উদ্যোগ গ্রহণ, পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে দায়ের করা মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রæত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা ও তা দূরীকরণে উদ্যোগ গ্রহণ এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্য আহরণ ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয়। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, টাস্কফোর্স প্রয়োজনে কোনো সদস্যকে কো-অপ্ট করতে পারবে এবং কোনো সংস্থার প্রতিনিধি বা বিশেষজ্ঞকে সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করতে পারবে। বিএফআইইউ টাস্কফোর্সকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।
অন্যদিকে ২০১৩ সালের ২৮ মে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স গঠন করে। অ্যাটর্নি জেনারেলকে টাস্কফোর্সের আহŸায়ক করা হয়। ১০ সদস্যের টাস্কফোর্সে রয়েছেÑজাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা। এ টাস্কফোর্সকে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিবছর অর্থ পাচার নিয়ে আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থা তথ্য প্রকাশ করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই), সুইস ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজে।
জিএফআই প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে এক হাজার ১৫১ কোটি ডলার (৯৮ হাজার কোটি টাকা) পাচার হয়েছে। দুটি প্রক্রিয়ায় এ অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) ও রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং)। তবে বিশ্বের অন্য সব দেশ ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাচারের তথ্য দিলেও ২০১৬ ও ২০১৭ সালের কোনো তথ্য দেয়নি বাংলাদেশ।
সুইস ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত টাকার স্থিতি ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যাংক (বাংলাদেশি টাকার যার পরিমাণ পাঁচ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা)। ২০১৮ সালে ছিল ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্র্যাংক (পাঁচ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা)। ২০১৭ সালে ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফ্র্যাংক (চার হাজার ৩৩১ কোটি টাকা)। ২০১৬ সালে ছিল ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্র্যাংক (পাঁচ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা)। তবে স্বর্ণালংকার, শিল্পকর্ম ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র জমা রাখলে তার আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে আমানতে যোগ করা হয় না।