জাকারিয়া পলাশ : গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর পাঁচ বছরের জন্য বড় অঙ্কের অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি বসিয়েছে ভারত। ভারতের অ্যান্টি-ডাম্পিং অ্যান্ড অ্যালাইড ডিউটিজ (ডিজিএডি) কর্তৃপক্ষের কাছে এ সংক্রান্ত অভিযোগ পুনঃতদন্তের দাবিতে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। দেশের অর্ধশতাধিক পাটপণ্য উৎপাদন ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এ শুল্কের শিকার হলেও এখন পর্যন্ত একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান আপিলের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও আপিলের প্রক্রিয়া অনুসরণের ক্ষেত্রে অপ্রস্তুত বলে জানা গেছে।
ভারতের ডিজিএডির তথ্যমতে, বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির তিন ধরনের পণ্যের ওপর টনপ্রতি ৬ দশমিক ৩০ থেকে ৩৫১ দশমিক ৭২ ডলার করে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। শুল্ক আরোপ হওয়া পণ্যগুলো হলো, হেসিয়ান ফেব্রিক (চট), জুট ইয়ার্ন (সুতা) ও পাটের বস্তা।
ভারতের এ অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটির বিরুদ্ধে ‘জনতা জুট মিলস লিমিটেড’ নামের একটি কোম্পানি এ মাসের মধ্যেই আপিলের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা জানান, অ্যান্টি ডাম্পিংয়ের মামলায় আপিলের প্রক্রিয়া বেশ জটিল। এ বিষয়ে দেশে কোনো দক্ষ আইনজীবী নেই। কয়েক বছর আগে ভারতে অ্যান্টি-ডাম্পিংয়ের মামলায় খালাস পেয়েছিল বাংলাদেশী ব্যাটারি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রহীম আফরোজ। সে সময় এক ভারতীয় আইনজীবীকে নিয়োগ করা হয়েছিল। ওই একই আইনজীবী এবার জনতা জুট মিলসের পক্ষে লড়ছেন।
এ প্রসঙ্গে জনতা জুটমিলসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) ও সাদাত জুট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহমুদুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ওই আইনজীবীর কাছ থেকে আমরা সব ধরনের পরামর্শ নিয়েছি। আপিলের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যও প্রস্তুত করা হয়েছে। এপ্রিল মাসের মধ্যেই আপিল করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘যদিও অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করা হয়েছে পাঁচ বছরের জন্য। কিন্তু মধ্যবর্তী সময়েই রিভিউয়ের জন্য আবেদন করার সুযোগ আছে।’
‘অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও আপিলের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ও কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে’ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ভারত এ সুরক্ষা শুল্কটি আরোপ করেছে কোম্পানিগুলো ধরে ধরে। তাই প্রত্যেক কোম্পানিকে নিজ নিজ উদ্যোগে আপিল করতে হবে। তবে, এখনও অন্য কোনো কোম্পানি এ বিষয়ে আপিলের প্রস্তুতি শুরু করেনি বলে জানা গেছে।’
সূত্র জানায়, জনতা জুট মিল থেকে পাটের সুতা ও চট ভারতে রফতানি হতো। ডিজিএডির অনুসন্ধানের সময় যথাযথ কৌশল অনুসরণ করায় প্রতিষ্ঠানটির একটি পণ্য অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক থেকে বেঁচে যায়। প্রতিষ্ঠানটির পাটের চটের ওপর শূন্য শতাংশ শুল্ক আরোপিত হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির পাটের সূতার (ইয়ার্ন) ওপর ২০ দশমিক ৬৮ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা বলছেন, যদিও অন্য কোম্পানির ওপর আরোপিত শুল্কের তুলনায় এ পরিমাণ কম, কিন্তু আমরা চাই এ পরিমাণও শূন্যে নামিয়ে আনতে। সেজন্য আমরা আপিল করেছি।
এদিকে পাটখাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অ্যান্টি-ডাম্পিং ইস্যুর সমাধানের জন্য কূটনৈতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আসছেন অনেক দিন ধরেই। তারই ধারাবাহিকতায় এ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পাটের ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য ভারতকে আহ্বান জানিয়েছেন।
কিন্তু অভিজ্ঞরা বলেন, এ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) অ্যান্টি-ডাম্পিং অ্যাগ্রিমেন্ট (১৯৯৪) অনুসরণ করতে হয়। বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই এই চুক্তির স্বাক্ষরকারী। ওই চুক্তি অনুযায়ী, ডাম্পিংয়ের অভিযোগ তদন্তের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। সে অনুযায়ী, আইনি প্রক্রিয়ায়ই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের স্টেক হোল্ডারদেরকে দক্ষ করে তোলার জন্য ডব্লিউটিও থেকে বিশেষজ্ঞ এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পাট খাতের উদ্যোক্তারা।
Add Comment